রংপুরে বাবা হাসপাতালে, ঢাকায় ছেলের ২৬ খণ্ড লাশ

রংপুরে বাবা হাসপাতালে, ঢাকায় ছেলের ২৬ খণ্ড লাশ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১০:১৭, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

তিনদিন আগে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। স্ত্রী লাকী বেগম যখনই স্বামীর খোঁজে ফোন করতেন, কলটি রিসিভ করতেন জরেজ।

তিনি বারবার জানাতেন, আশরাফুল নাকি খুব ব্যস্ত—কেউ বলত কালেকশনে গেছেন, কখনো আবার অন্য অজুহাত দিতেন।

ধীরে ধীরে সন্দেহ বেড়ে গেলে লাকী বেগম থানায় গিয়ে স্বামীর বিষয়ে খোঁজ করেন। সেখানে গিয়ে যে খবর তিনি পান, তা ছিল ভয়াবহ। ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামের ভেতর থেকে পুলিশ যে খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছিল, সেটিই যে তার স্বামীর—এ তথ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট।

আশরাফুলের শ্যালক আব্দুল মজিদ জানান, বাবাকে হাসপাতালে রেখে মালয়েশিয়া ফেরত বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় যান আশরাফুল। বুধবার বিকেলে বোনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। এরপর থেকেই ফোনে আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। বৃহস্পতিবার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে তারা জানতে পারেন আশরাফুল হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, বুধবার বিকেলের পর আশরাফুলকে ফোন দিলে জরেজই রিসিভ করতেন এবং জানাতেন—আশরাফুল ব্যস্ত, বাইরে আছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরেও একই ঘটনা ঘটে। পরে লাকী বেগম জরেজের স্ত্রীর কাছে গেলে তিনি জরেজকে ফোন দেন। তখন জরেজ স্ত্রীকে জানায়, আশরাফুলের ফোন নাকি ড্রেনে পড়ে পাওয়া গেছে। এতসব সন্দেহজনক ঘটনায় পরিবার থানায় গেলে সেখানেই তারা হত্যার খবর নিশ্চিত হন। এতে আশরাফুলের স্ত্রী ভেঙে পড়েন।

বদরগঞ্জ থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান জানান, নিহতের পরিবার থানায় এসেছিল। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে রমনা ও শাহবাগ থানা পুলিশকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ঢাকায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী, আশরাফুল হক ছিলেন সহজ-সরল ও সামাজিক মানুষ। গ্রামের গরিব-অসহায় মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি সবসময়। ব্যবসায়িক কাজেও তিনি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি বজায় রেখে চলতেন। শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা জরেজ মিয়া দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া ছিলেন এবং দেশে ফিরে আশরাফুলের সঙ্গে প্রায়ই চলাফেরা করতেন। জরেজ আশরাফুলের কাছে বড় অঙ্কের টাকা ধার চাইতেন বলেও জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ঢাকায় যাওয়ার আগে মঙ্গলবার আশরাফুল ইউনিয়ন পরিষদে জমির রেজিস্ট্রির কাজ করেন এবং ওয়ারিশ সনদ নেন। সেদিন সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজও আদায় করেন। এরপর রাতে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে বন্ধু জরেজের সঙ্গে ঢাকায় রওনা দেন তিনি।

৪২ বছর বয়সী আশরাফুল হকের বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে। পিতা আব্দুর রশিদ এবং মাতা এছরা খাতুন। তিনি ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ ও আলু আমদানির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এ জন্য সরকারি লাইসেন্সও ছিল।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement