রাজধানীতে ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় রংপুরে শোকের মাতম
Published : ১৪:৩৮, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানী ঢাকার জাতীয় ঈদগাহের সামনে ড্রামের ভেতর থেকে ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৩৫) এর খন্ড-বিখন্ড মরদেহ উদ্ধারের পর গ্রামের বাড়ী রংপুরের বদরগঞ্জে শোকের মাতম চলছে।
পুলিশের ধারণা, দু-এক দিন আগে হত্যার পর এখানে ড্রামে করে মরদেহ ফেলে গেছে। খন্ডিত মরদেহের গলা থেকে পা পর্যন্ত সবকিছুই আলাদা। মরদেহটি ২৬ টুকরা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় অভিযোগের তীর তার বন্ধু জরেজের দিকে তুলেছেন নিহতের মা এছরা খাতুন।
গত ১৩ নভেম্বর)বৃহ¯পতিবার সন্ধ্যায় হাইকোর্ট সংলগ্ন ফুটপাতে প্লাস্টিকের ড্রামে ওই ব্যক্তির খন্ডিত মরদেহ পাওয়া যায়। প্রথমে পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পরে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ। নিহত আশরাফুল হক রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে।
তিনি পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ ও আদাসহ বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতেন। নিহত আশরাফুল হকের স্ত্রী, দুই সস্তান ও বাবা-মা রয়েছে। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বৃহ¯পতিবার সন্ধ্যার দিকে হাইকোর্ট সংলগ্ন রাস্তা থেকে নীল রঙের দুটি ড্রাম দেখে মানুষ থানায় সংবাদ দেন।
পুলিশ এসে ড্রাম খুলে খন্ডিত মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দুটি ড্রামের একটিতে চাল ছিল। অন্যটিতে হাত–পা–মাথাসহ ২৬ টুকরা মরদেহ কালো পলিথিনে মোড়ানো ছিল। গলা থেকে পা পর্যন্ত সবকিছুই খন্ডিত, মুখে ছিল দাড়ি। পুলিশের ধারণা, দু-এক দিন আগে হত্যার পর মরদেহটি ড্রামে ভরা হয়।
নিহতের মা এছরা খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, মোর ব্যাটাক জরেজ খায়া ফেলাইলো। মোর ব্যাটাক অয় নিয়ে গেছে। টাকা আনার জন্য জরেজ মোর ব্যাটাক নিয়ে গেইছে। এলাকাবাসী বলেন, ছোটবেলার বন্ধু জরেজের সঙ্গে যৌথ ব্যাবসা করতেন আশরাফুল হক। কিন্তু তিন-চার বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান জরেজ।
মাসখানেক আগে দেশে ফিরে এসে তিনি এবার জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ জন্য বন্ধু আশরাফুল হকের কাছ থেকে তিনি টাকা ধার চেয়েছিলেন। আশরাফুল হক তাকে টাকা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে গত শনিবার আশরাফুল হকের বাবা আব্দুর রশিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে বাবার সঙ্গে দেখা করে বন্ধু জরেজকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। এদিকে ঢাকায় যাওয়ার পরদিন বুধবার সন্ধ্যা থেকে আশরাফুল হকের স্ত্রী বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। প্রতিবারই মোবাইল বেজে কেটে যায়, কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।
এক প্রতিবেশী বলেন, ফোন রিসিভ না করায় বৃহ¯পতিবার বিকালে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য জরেজের বাড়িতে যান আশরাফুল হকের স্ত্রী লাকি বেগম। এসময় লাকী বেগমকে জরেজের স্ত্রী বলেন, টেনশন করিও না তারা দুইজন তো একসঙ্গে আছে। পরে আশরাফুল হকের স্ত্রী তার স্বামীর নাম্বারে আবারও ফোন দিলে জরেজ ফোন রিসিভ করে বলেন, ফোন আমার কাছে রেখে আশরাফুল বাইরে গেছে।
কিন্তু সে কোথায় আমি জানি না। এর কয়েক ঘণ্টা পরই জাতীয় ঈদগাহের সামনে ড্রামের ভেতর থেকে খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিবারের সদস্যরা ছবির মাধ্যমে মরদেহটি আশরাফুলের বলে শনাক্ত করেন। আশরাফুল হকের মুত্যুর ঘটনায় পরিবাব ও আত্মীয় স্বজনের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আতিকুর রহমান বলেন, নিহত আশরাফুল হকের পরিবারের সদস্যদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য রমনা জোনের ডিসি ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে
বিডি/এএন





























