বিশ্ববাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সূচক দুর্বল হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামে নতুন করে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে।
রয়টার্সের সোমবার (১০ নভেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, সর্বশেষ লেনদেনে স্বর্ণের দাম প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্কিন অর্থনীতির দুর্বলতা এবং ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদের হার হ্রাসের ইঙ্গিত—দুটি বিষয়ই স্বর্ণের দাম বাড়ানোর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্পট গোল্ডের দাম ২ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৯ দশমিক ৪৯ ডলার, যা ২৭ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন সোনার ফিউচার ১ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি আউন্সে পৌঁছেছে ৪ হাজার ৮৭ দশমিক ৮০ ডলারে।
রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের সিনিয়র বিশ্লেষক জিগার ত্রিবেদীর মতে, বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য অনিশ্চয়তা ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। এতে সোনার চাহিদা ও দাম উভয়ই বেড়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দেশটিতে চাকরির সংখ্যা কমেছে—বিশেষ করে সরকারি ও খুচরা খাতে কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। ব্যবসাগুলো ব্যয় কমাতে ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহারে ঝুঁকে পড়ায় ছাঁটাই বেড়েছে। এর সঙ্গে ৪০ দিনের দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থা অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে।
ফলে ভোক্তা আস্থার সূচকও তিন বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান সিএমই ফেডওয়াচ টুলের তথ্যমতে, বিনিয়োগকারীরা এখন প্রায় ৬৭ শতাংশ সম্ভাবনা দেখছেন যে ডিসেম্বরে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমাতে পারে। সাধারণত সুদের হার কমলে স্বর্ণের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে যায়, কারণ এতে সুদবিহীন সম্পদ হিসেবে সোনার আকর্ষণ বাড়ে।
অন্যদিকে অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। স্পট সিলভারের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, দাঁড়িয়েছে প্রতি আউন্সে ৪৯ দশমিক ৯১ ডলার—যা ২১ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। প্লাটিনামের দাম ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৭৬ দশমিক ২৫ ডলারে এবং প্যালাডিয়ামের দাম ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে ১ হাজার ৪০৩ দশমিক ৬৩ ডলারে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক সপ্তাহে ফেডের নীতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবণতার ওপর নির্ভর করবে স্বর্ণবাজারের পরবর্তী দিকনির্দেশনা।



































