সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির—হঠাৎ জনসমাবেশে অসুস্থ হয়ে মঞ্চেই পড়ে যান। সেই মুহূর্তে আশপাশের সকলে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। কিন্তু যা সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য, তা হলো—ঘটনাস্থলে উপস্থিত অপর রাজনৈতিক দলের নেতা সারজিস আলম কোনো দ্বিধা ছাড়াই দ্রুত দোয়ার জন্য হাত তুলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন ওই অসুস্থ নেতার সুস্থতার জন্য। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষের প্রতি এমন আচরণ আজকের দিনে বিরল। যেখানে প্রতিনিয়ত বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য, আক্রমণাত্মক আচরণ এবং কাদা ছোড়াছুড়ি দেখা যায়, সেখানে এই দৃশ্য এক অনন্য মানবিক বার্তা দেয়।
এটি মনে করিয়ে দেয়, রাজনীতি কেবল ক্ষমতার লড়াই নয়—এটি আদর্শ, সহমর্মিতা এবং মূল্যবোধের ক্ষেত্রও বটে। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। কারণ গণতন্ত্র মানেই মতের বহুত্ব। কিন্তু সেই ভিন্নমত যেন মানবতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের দেয়াল না ভেঙে দেয়—এটিই হওয়া উচিত একটি পরিপক্ব সমাজের লক্ষ্য। প্রতিপক্ষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, তার জন্য শুভকামনা জানানো, এবং প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া—এগুলোই গঠনতান্ত্রিক চর্চার প্রকৃত সৌন্দর্য।
এই ঘটনার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বার্তা সমাজে ছড়িয়ে পড়ে—আমরা ভিন্ন দলে, ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাস করি ঠিকই, কিন্তু মানবিকতা আমাদের সবার ওপরে। রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে একজন মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখানো আমাদের সভ্যতার পরিচায়ক।
এই ভিডিওটি শুধু একটি ঘটনার চিত্রায়ন নয়, এটি আমাদের রাজনীতি, সমাজ এবং ব্যক্তিজীবনে সহনশীলতা ও উদারতার প্রয়োজনীয়তা কতটা গভীরভাবে বিরাজমান তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আমরা আশা করি, রাজনীতির মাঠে এ ধরনের ইতিবাচক উদাহরণ আরও দেখা যাবে এবং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি মানবিক ও শ্রদ্ধাশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।