রংপুর বিভাগে ৩৩টি আসন দখলে নিতে জামায়াত উজ্জীবিত

রংপুর বিভাগে ৩৩টি আসন দখলে নিতে জামায়াত উজ্জীবিত ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:১৮, ১ নভেম্বর ২০২৫

চব্বিশের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান পাকা পোক্ত করার জন্য রাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির মাঠে উজ্জীবিত।

রাজনীতির সব আলোচনার ভিড়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে তৃণমূলের জনমত তাদের পক্ষে নিতে কাজ করছে দলটির নেতাকর্মীরা। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের রংপুর অঞ্চলে ভোটে জিতে আসতে পারবে এমন আসনে একাধিকবার পথসভা ও জনসভা করেছেন।

এ নিয়ে রংপুর অঞ্চলে ভোটের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রংপুর বিভাগে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বড় শোডাউনের অংশ হিসেবে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে গত ৪ জুলাই শুক্রবার বৃহৎ সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

দলটির পক্ষে দাবি করা হচ্ছে আসনগুলোতে দলীয় প্রার্থীদের জেতাতে দলের কর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি পুরো বিভাগের মানুষের মধ্যে দেশকে নিয়ে জামায়াতের পরিকল্পনা ও লক্ষ্যসহ নানা বিষয়ে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

একই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম, নির্যাতন ও অবিচার জনগণকে অবহিতকরণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে জনসভা করা হচ্ছে।  দলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী দুঃশাসনের সময়ে স্থানীয় থেকে জাতীয় নির্বাচনে রংপুর অঞ্চলে জামায়াত ভালো অবস্থানে ছিল।

ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে তাদের প্রার্থী আওয়ামী লীগ জোটকে হটিয়ে ভোটে জিতে আসতে পেরেছিলেন।দলটির তৃণমূল জরিপ অনুযায়ী, বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। জানা যায়, রংপুর বিভাগে একচ্ছত্র দখলে রাখা জাতীয় পার্টি দলীয় কোন্দল-বিভক্তি, সাংগঠনিক দুর্বলতা, বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে অংশগ্রহণসহ নানা কারণে আস্থার সংকটে পড়েছে।

এমনকি জেলা, উপজেলাসহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলটি সুবিধা করতে পারেনি। ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়ে রংপুর বিভাগের পরিবর্তে রংপুর জেলাকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না জামায়াত।

সেই লক্ষ্যে তৃণমূলে মাঠ গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। মাঠ বৈঠক, উঠান বৈঠকসহ ভোট প্রস্তুতির সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবেই এগিয়ে নিয়েছেন তারা। বিগত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্য বলছে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনের মধ্যে জাপার দখলে ছিল ১৭টি আসন।

আওয়ামী লীগ ৯টি, বিএনপি একটি, সিপিবি তিনটি, জামায়াত একটি, বাকশাল ও ন্যাপ একটি করে আসন পায়। ১৯৯৬-এর সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর বিভাগে জাতীয় পার্টি পায় ২১টি আসন। আওয়ামী লীগ ৮, বিএনপি ৩ ও জামায়াত পায় ১টি।

এরপর ছন্দপতন শুরু হয়। ২০০১ সালের নির্বাাচনে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে জোট করেও ২১ থেকে কমে ১৪টি আসন পায় জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগ ৬টি, বিএনপি ৯টি ও জামায়াত পায় ৪টি আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে চারদলীয় ঐক্যজোটের বিপরীতে আওয়ামী লীগ-জাপার সমন্বয়ে গঠিত হয়। মহাজোট গঠনে বিএনপি-জামায়াত কোণঠাসা হয়।

২০১৪ ও ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত। তবে সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। জামায়াতের একাধিক সূত্রে জানা যায়, রংপুরের ৬টি আসনের মধ্যে রংপুর-১, রংপুর-২ ও রংপুর-৪ ও রংপুর-৫ আসনে অবস্থান ভালো হলেও ১, ২ ও ৫ আসন দখলে রাখতে চায়।

কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভুরুঙ্গামারী) ও কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী-রৌমারী-রাবিজপুর), গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ), গাইবান্ধা-২ (সদর), গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর), লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা),পঞ্চগড়-২, নীলফামারীর চারটি আসনের মধ্যে নীলফামারী-৩ আসনে ১৯৮৬, ১৯৯৬ ও ২০২১ সালে নির্বাচিত হয় দলের প্রার্থী।

এবারও নীলফামারী-১, নীলফামারী-২ ও নীলফামারী-৩, ঠাকুরগাঁও-২ (বালিডাঙ্গি-হরিপুর) এবং দিনাজপুরের ৬টি আসনের মধ্যে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহরোল), দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) ও দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোরাঘাট ও হাকিমপুর) আসনে জিততে চায়।

ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি দলীয় প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগেও, গাইবান্ধা, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামে তাদের সংসদ সদস্য ছিলেন।

ভোটের লড়াইয়ে তীব্র প্রতিযোগিতায় ছিল রংপুরের মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া ও বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ আসনে। আওয়ামী লীগ জোটের পতনের পর প্রথম নীলফামারীতে সমাবেশ করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। সেখানেই দুইবার বৃহৎ সমাবেশ করে দলটি।

এরপর দুই দিনের সফরে রংপুরের পাগলাপীর, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও গাইবান্ধা এবং লালমনিরহাটে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ করে। এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগের কড়া সমালোচনা, সরকারের দুঃশাসন, তাদের ওপর চলা নির্যাতন, সরকারের দুর্নীতির খতিয়ান তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে জামায়াতের পক্ষে থাকার আহ্বান জানান।

জামায়াত নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন বিনা কারণে নেতাকর্মীরা নির্যাতিত-নিপষিত হয়েছে। এরপরেও তৃণমূলে কাজ করেছি, এখনো করছি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও জাতীয় পার্টি চরম কোণঠাসায় পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

রংপুর জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জনসভা তো দূরের কথা, প্রকাশ্যে কথা বলারও সুযোগ ছিল না। জুলুম-নির্যাতনের পর ফ্যাসিস্টদের পতনে দেশের মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। সেই স্বস্তিকে দেশ গঠনের কাজে লাগাতে চাই।

দেশের মানুষ এবার ঐক্যবদ্ধ। দীর্ঘদিন ভোট দিতে পারবে দেশের মানুষ। রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনেরজনগণ ন্যায়-ইনসাফের পক্ষে তাদের প্রত্যাশিত রায় দেবে। জামায়াত বিভাগের ৩৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সবগুলো আসনেই জেতার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement