ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সব দলকে আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার

ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সব দলকে আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

Published : ১২:১১, ১ জুন ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শুরু হতে যাচ্ছে আগামীকাল। 

সোমবার (২ মে) বেলা ৩টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সংলাপের উদ্বোধন করবেন। এতে প্রথম ধাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এরপর মঙ্গলবার (৩ মে) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করবে কমিশন। তবে আগামীকাল ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট পেশ উপলক্ষ্যে সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একদিন পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা আবার তাদের ডেকেছেন। আজ এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। 

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ২ জুন দ্বিতীয় পর্বের সংলাপ শুরু হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্বোধনী বক্তব্য রাখবেন। অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখতে পারেন বলে জানান তিনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আশা করছি দ্বিতীয়বারের আলোচনায় আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। তার ভিত্তিতে একটি জাতীয় সনদ হবে। এই সনদে সবাই স্বাক্ষর করবে। আমরা আশা করছি, এটা জুলাইয়ে হতে পারে। এটা আমার আকাঙ্ক্ষা, কোনো সিদ্ধান্ত নয়।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৬ মাস মেয়াদি ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম ধাপের সংলাপের সূচনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুদক সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের বিষয়ে ৩৮ রাজনৈতিক দল এবং জোটের কাছে মতামত চাওয়া হয়। মতামত দেওয়া ৩৩ দল এবং জোটের সঙ্গে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ৪৫টি বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। দ্বিতীয় দফার সংলাপে ৩১ দল এবং জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন সংস্কার সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্যে পৌঁছানো ও ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করা এই ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য। 

১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করা এ কমিশনকে ৬ মাস সময় দেওয়া হয়। ঐকমত্য কমিশন ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠায়। 

এরপর ৫ মার্চ ৫টি কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত সুপারিশ ছিল ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগসংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসনসংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সুপারিশ ছিল ২০টি। 

স্প্রেডশিট পাঠানোর পর ১৫ মার্চের মধ্যে মতামত দিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানায় ঐকমত্য কমিশন। তবে কিছু দল সময় বাড়ানোর অনুরোধ করে। পরে ৩৫টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছ থেকে মতামত পাওয়া যায়।

কিছু কিছু দল স্প্রেডশিটে মতামত দেওয়ার পাশাপাশি বিস্তারিত মন্তব্য ও বিশ্লেষণ জমা দেয়। মতামত পাওয়ার পাশাপাশি ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। 

আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশকিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে বলে জানা গেছে। 

এর মধ্যে প্রাথমিক আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন ও সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত। 

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্বের সংলাপ শেষে অগ্রগতি তুলে ধরতে ২৬ মে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। 

তিনি বলেছেন, জুনের শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাইর মধ্যেই একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা সম্ভব হবে।

আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন থাকলেও কাজের খবর নেই-সালাহউদ্দিন: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা আবার তাদের ডেকেছেন। 

তিনি বলেন, ‘ভাবটা আমরা বুঝছি এ রকম, আনুষ্ঠানিকতা আর আলোচনার কোনো কমতি নেই, কিন্তু কাজের কোনো খবর নেই। আবার ডেকেছেন ২ তারিখে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনার শুভ উদ্বোধন হবে। কেন? উদ্বোধন কবার করতে হয়? সংস্কার নিয়ে কতবার উদ্বোধন করবেন? প্রথম পর্যায়ে আলোচনার একবার উদ্বোধন করেছেন। 

দ্বিতীয় পর্যায়ে আবার উদ্বোধন করবেন, তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে আপনারা এটা একত্র করবেন। এভাবে আপনারা আমাদের সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন!’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমদ একথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, সংস্কার কমিশনে আপনারা নিজেদের মতো করে যেসব সংস্কার সংবিধানে চান, সেই সংস্কারগুলো জাতিকে মেনে নিতে হবে, এই ইগো কেন আপনারা লালন করেন? আপনারা কেন মনে করেন যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলকে (এনসিসি) সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে বেকার করে দেবেন? সেটা আমাদের কেন মানতে বলেন?’

সংস্কার কমিশন আরও কিছু অভিনব সংস্কার প্রস্তাব নিজেরা দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মনে হয় যেন আমাদের বাধ্য হয়ে সেসব সংস্কার প্রস্তাবে একমত হতেই হবে। তাহলে তো এটা বাকশাল তৈরি হলো!’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা লিখিতভাবে বলেছি, আলোচনা করেছি কী কী বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি, আর কী কী বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত; সেগুলো কম্পাইল করে আপনারা জাতির কাছে প্রকাশ করুন। সংস্কার হবে, সংস্কার আমাদের প্রধানতম এজেন্ডা। তার চেয়েও বেশি জরুরি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার। সবাইকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, যারাই রাষ্ট্রক্ষমতায় আসবে, তারা সংস্কার ও বিচার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বাধীন বিচার বিভাগ তাদের মতো বিচারকার্য চালিয়ে যাবে। সংস্কার তো কখনো শেষ হয় না। দেশের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার হতেই থাকবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement