জনবল সংকটে ধুঁকছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা

Published : ১৭:৪০, ৪ মে ২০২৫
দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকটে ধুঁকছে নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ৪ ভাগের এক ভাগ কর্মচারী দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
জনবলের অভাবে পড়ে আছে দেশের বৃহত্তম এ রেলওয়ে কারখানার ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আমদানি করা মেশিনারিজ। নষ্ট হচ্ছে সেগুলো। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় রয়েছে কাঁচামালের তীব্র সংকট। এসব কারণে কারখানাটিতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, আসাম-বেঙ্গল রেলপথ ঘিরে ১৮৭০ সালে স্থাপিত হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। ১১০.২৯ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে রয়েছে ২৭টি শপ (উপকারখানা)। এখানে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ ও মালবাহী যানের (ওয়াগন) মেরামতের কাজ করা হয়। পাশাপাশি রেলের স্টিম রিলিফ ক্রেন ও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামতের কাজও হয়।
এছাড়া ক্যারেজ, ওয়াগন ও লোকোমোটিভের ১২০০ রকমের খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এ কারখানায়। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতা ও গুণগতমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানাটি আধুনিকায়ন করা হয়।
ওই আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ব্রডগেজ ও মিটারগেজ যাত্রীবাহী বগি এবং ওয়াগন মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ১৭টি ওয়ার্কশপ মেরামত করা হয়। ৪৩ ধরনের মেকানিক্যাল ও ১৩ ধরনের ইলেকট্রিক্যাল মেশিনারিজ প্রতিস্থাপন করা হয়।
এছাড়া ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনসহ একটি ওভারহেড পানির ট্যাংক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দক্ষ জনবল না থাকায় আধুনিকায়নের কোনো সুফলই মিলছে না।
বর্তমানে কারখানাটিতে কর্মকর্তা ও শ্রমিক-কর্মচারীর পদ ২৮৫৯টি। এর মধ্যে আছেন ৭১৬ জন। অর্থাৎ ২১৪৩টি পদই শূন্য। জনবলসংকটের কারণে কারখানায় ক্যারেজ মেরামতের প্রতিদিনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
প্রতিদিন ৩টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও হচ্ছে দুটি করে কোচ। ২৭টি শপে ৭৪০টি মেশিন পরিচালনায় নেই প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক।
এদিকে কারখানায় নেই পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দও। এতে চাহিদা ও সময়মতো কাঁচামালের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না।
কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেন, বেশির ভাগ সময়ই মালপত্র কেনার দরপত্রে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা হয়। ফলে কোচ ও ওয়াগন মেরামতের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জোগান সময়মতো আসে না। অনেক সময় নিম্নমানের মালামালও চলে আসে।
সেগুলো ঠিক করতে গিয়ে অতিরিক্ত জনবল, কর্মঘণ্টা ও বিদ্যুতের অপচয় হয়। অথচ কারখানাটি রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের হলেও সারা দেশের রেলওয়ের চাহিদা পূরণ করে।
ক্যারেজ শপের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মমিনুল ইসলাম বলেন, ক্যারেজ শপে ৩৯৫টি পদের বিপরীতে কাজ করছেন মাত্র ৮৫ জন। জনবল সংকটে কাঙ্খিত উৎপাদনসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে মেইনটেন্যান্সে শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিশেষ ট্রেনের রেক মেরামত ও বিদেশ থেকে আনা নতুন ট্রেনের অ্যাসেম্বলিংয়ে বিঘ্ন ঘটছে।
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী একটি ক্যারেজে ৪ বছর অন্তর সাময়িক সংস্কার (পিওএইচ) এবং ১২বছর অন্তর সাধারণ সংস্কার (জিওএইচ) করার কথা।
কিন্তু জনবল সংকট ও কাঁচামালের অভাবে বহু ক্যারেজ এখন মেরামত ছাড়াই বছরের পর বছর পড়ে আছে। তিনি আরও বলেন, জনবলসংকট দূর করতে শূন্য পদগুলোয় দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। সময়মতো কাঁচামালের সরবরাহ করতে হবে। তবেই এই কারখানার উৎপাদন আগের অবস্থায় ফেরানো সম্ভব।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) শাহ সুফী নুর মোহাম্মদ বলেন, সর্বশেষ ২০২৩ সালে ২৮৯ জনকে খালাসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরপরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে।
বর্তমানে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে শ্রমিকেরা অতিরিক্ত সময় কাজ করে উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শূন্যপদগুলো পূরণ হলে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পেলে আবার এ কারখানা কর্মমুখর হবে।
বিডি/ও