ইয়াবার পর হেরোইন বিস্তারের ঝুঁকি, সীমান্তে অস্থিরতা

Published : ১২:০৯, ২১ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে মাদকের বিস্তার ঘিরে। দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মাদক ইয়াবার বিস্তার ঘটেছিল এ সীমান্ত হয়েই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে উচ্চ মাত্রায় আফিম চাষ হওয়ায় দেশে হেরোইনের বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মাদক নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ ধরনের মাদক উদ্ধার হয়েছে। তবে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার ও ইনজেকটিং ড্রাগ—এই ৯ ধরনের মাদকের প্রচলন বেশি। ইয়াবার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে আইস ও লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড (এলএসডি) মাদকও অনেকে গ্রহণ করছে। সবচেয়ে শক্তিশালী মাদক এলএসডি মূলত বিমানবন্দর হয়ে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলো থেকে আসছে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট এলাকায় এ মাদক গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র।
ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ, বিয়ার ও ইনজেকটিং ড্রাগ—এই ৯ ধরনের মাদকের প্রচলন বেশি। ইয়াবার বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে আইস ও লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড (এলএসডি) মাদকও অনেকে গ্রহণ করছে।
মানুষের ৯৮ শতাংশই আবার ধূমপায়ী। তাদের কেন্দ্র করে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার মাদক ব্যবসা হচ্ছে। দিনে কেবল ইয়াবা বেচাকেনা হচ্ছে দু-তিন কোটি টাকার।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মাদকবিরোধী অভিযানেও ভাটা পড়ে। ফলে বর্তমান পরিসংখ্যান দিয়ে মাদকের প্রকৃত চিত্র নির্ণয় করা সম্ভব নয়। মাদক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ব্যস্ততা বাড়ে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৎপরতা বাড়ায় মাদক কারবারীরাও। এ প্রবণতা থেকে বলা যায়, বর্তমানে দেশে মাদকের বিস্তার বেড়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিয়ানমারকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আফিম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। সীমান্তবর্তী এ এলাকায় জান্তা সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সেখানে আরাকান আর্মিই নিয়ন্ত্রণ করছে। সীমান্তের এ অস্থিরতাকে মাদক কারবারীরা বড় সুযোগ হিসেবে নিয়েছে। ইয়াবার পাশাপাশি বাংলাদেশে হেরোইনের ব্যবসা বিস্তারের চেষ্টা করছে তারা।
সংশ্লিষ্ট ব৵ক্তিরা বলছেন, মাদকের বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এর উদ্ধারের হিসাব থেকে। দেশের ভেতর চোরাচালান হওয়া মাদকের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ উদ্ধার হয় বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র। গত ১৫ বছরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কেবল ইয়াবা বড়িই উদ্ধার করেছে ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৯০টি। ধারাবাহিকভাবে ইয়াবার বিস্তার বেড়েছেই। পাশাপাশি অন্য আরও কিছু মাদকের বিস্তার ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।
ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) ২০২৩ সালের এক তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এশিয়ার দেশগুলো বিবেচনায় নিলে মাদকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে নিয়মিত মাদকসেবীর সংখ্যা দেড় কোটির মতো। এর বাইরে আরও ৫০ লাখ অনিয়মিত মাদকসেবী আছে। এ ২ কোটি
আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ইয়াবার চেয়ে অন্তত ২৫-৩০ গুণ বেশি শক্তিশালী মাদক। এ মাদকের প্রধান তিনটি রুট হলো—মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে কক্সবাজার, মিয়ানমার-মিজোরাম-ত্রিপুরা-বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার-মণিপুর-ত্রিপুরা-ঢাকা।