ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যেন মহাযন্ত্রণা: ধীরগতির প্রকল্পে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যেন মহাযন্ত্রণা: ধীরগতির প্রকল্পে যাত্রীদের  দুর্ভোগ চরমে

The Business Daily

Published : ০১:১২, ১৩ জুলাই ২০২৫

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয়েছে দুই বছর আগে, তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ফলে ভাঙাচোরা সড়কে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, বাড়ছে যাত্রীদের দুর্ভোগ। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক এখন যাত্রীদের কাছে পরিণত হয়েছে এক স্থায়ী দুর্ভোগের প্রতীকে। গত শুক্রবার মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে ২৫ কিলোমিটারজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এতে আটকা পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের গাড়িবহরও। ভৈরব টোলপ্লাজা পার হওয়ার পর থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত মাত্র ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। এই মহাসড়কে বর্তমানে দুটি বড় প্রকল্পের কাজ চলমান, যার একটি হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ এবং অপরটি হচ্ছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০.৫৮ কিলোমিটার চার লেন প্রকল্প। তবে উভয় প্রকল্পের অগ্রগতি অত্যন্ত ধীর। আশুগঞ্জ-আখাউড়া প্রকল্পের কাজ একপর্যায়ে বন্ধও ছিল কিছুদিন। সড়কের বিভিন্ন অংশে এখনো পুরোদমে কাজ শুরু না হওয়ায় এবং পুরোনো সড়কে জরুরি সংস্কার বন্ধ থাকায় যানবাহন চলতে হচ্ছে ভাঙাচোরা রাস্তায়। খানাখন্দ, গর্ত আর সরু রাস্তার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকছে যানবাহন। বৃষ্টির দিনে সড়ক কাদায় রূপ নেয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে রয়েছে রাস্তার ওপর অবৈধ দোকানপাট এবং যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজটের বাড়তি চাপ।

সিলেট অংশের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে শেরপুর পর্যন্ত মহাসড়ক পরিদর্শনে দেখা গেছে, অনেক জায়গায় একপাশ বন্ধ রেখে রাস্তার সম্প্রসারণ ও সেতু-কালভার্ট নির্মাণকাজ চলছে। কোথাও কোথাও জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের কাজও চলছে। এসব কারণে রাস্তা সরু হয়ে যানবাহনের গতি কমে এসেছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিভিন্ন পরিবহনের চালকরা জানিয়েছেন, আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে গাড়ির গতি নেমে আসে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারে। এ অংশে প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। বাসচালকরা মহাসড়কে দুর্ভোগের তিনটি মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ভাঙাচোরা রাস্তা, চলমান নির্মাণকাজ এবং সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাট। এসব মিলিয়ে পুরো পথটাই হয়ে উঠেছে যন্ত্রণার যাত্রা। সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, পুরোনো সড়কে বড় ধরনের ব্যয় করা হচ্ছে না, কারণ নতুন রাস্তা নির্মাণই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সামান্য সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার দেবাশীষ রায় জানান, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে, তবে এখন তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা গেছে। চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ জানান, আশুগঞ্জ-আখাউড়া অংশের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার মহাসড়ক ছয় লেনে এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৫৬.১৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী বছরের ডিসেম্বরেই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মতে, সময়মতো কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

 

BD/S

শেয়ার করুনঃ
Advertisement