অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করলে যা করবেন

অনুমতি ছাড়া কেউ ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করলে যা করবেন

আইন-আদালত ডেস্ক

Published : ১৬:৩৮, ১১ নভেম্বর ২০২৪

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন নুসরাত আরমিন (পিংকি)। আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পারভেজ কামাল (অনিক)-এর সঙ্গে তিন বছরের সম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক কর্যক্রম থেকে পরিচয় থেকে ভালোবাসা। নিজেদের মধ্যে স্বাধীনতা, বোঝাপড়া ও দায়িত্ববোধ থেকে বাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। বাবা-মার একমাত্র মেয়ে আদুরে পিংকির বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনকাল ভালোই চলতেছিলো।

একটা সময় ছেলেটা রাজনীতিতে জড়িয়ে যায়।এরপর যেকোনো কারণে হঠাৎ একদিন পিংকি এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন। কী কারণ তা আজও অজানা। এ ক্ষেত্রে পিংকির অপরাধ ছিলো সে অনিকের কথা না শুনে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। অথচ ছেলেটা স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলো কোনো প্রশ্ন রাখতো না। দুইবছর পরে আস্তে আস্তে দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং কারণে-অকারণে তাদের মধ্যে মতের অমিল দেখা গেছে। বিনা কারণে কথা কাটাকাটিও হতো। এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে নাহিদা এই প্রেমের সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসেন। কিন্তু ঘটনা এখানেই শেষ নয়।

অনিক একটা সময় বিভিন্নভাবে অথবা বন্ধুদের বা অন্যদের দিয়ে তাকে হুমকি দিতে থাকে। বিশেষ করে, ফোনে থাকা কিছু ছবি প্রকাশের বিষয়। এতে করে একটা সময় পিংকি অপ্রত্যাশিত কিছু ঝামেলার মুখোমুখি হন। এমনকি পারিবারিকভাবে তার বিয়ে ঠিক হলেও অনিকের আইন বহির্ভূত কাজের জন্য বিয়ে ভেঙে যায়। প্রত্যক্ষভাবে ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন হতভাগা পিংকি।

সমাজে এমন ঘটনা প্রায় ঘটছে। পিংকির মতন একজন শুধু এই ধরণের ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী বেড়াচ্ছেন, তা নয়। আরও অনেক নারী সময়ে-অসময়ে এই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাই বর্তমানে সাইবার অপরাধ একটি ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে পরিণত হয়েছে। আর নারীরাই এর শিকার হচ্ছেন বেশি।

এ যুগে তথ্য–প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহারে দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি প্রযুক্তির অপব্যবহারেও সমাজ অনেক দূর পিছিয়ে পড়ছে। বর্তমানে ফোন কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন সহজলভ্য প্যাকেজের কারণে ইন্টারনেট এখন সবার হাতের নাগালে। স্মার্টফোন মানুষের হাতে হাতে। এই স্মার্টফোনের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, গুগল, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রাম ইত্যাদির ব্যবহার অনেক সহজ। এতে নারী সমাজ বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অন্য কোন ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া যদি তার ছবি তোলে, প্রকাশ করে বা প্রেরণ করে, তাহলে এমন কাজ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে তিনি অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আইন যা বলেবিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আইন যা বলে

সমাজের বিভিন্ন অপরাধের মতো সাইবার ক্রাইমও এক ধরনের অপরাধ। এই অপরাধে দোষীদের শাস্তি পাওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে এআই ফটোশপ দিয়েও যে কোনো ছবিকে আপত্তিকর ছবিতে পরিণত করা যায়। এতে নারীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বেশি। এ ক্ষেত্রে সর্তকতার প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা ব্যক্তিজীবনেও বন্ধু নির্বাচনে সর্তক হওয়া খুব প্রয়োজন।

আইনজীবী পরামর্শ দেন, এ ধরনের অপরাধের শিকার ভুক্তভোগী নারীরা প্রাথমিকভাবে নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের ক্ষেত্রে ফোনালাপের রেকর্ড, মেসেজের স্ক্রিনশট, বিভিন্ন আলামতের স্ক্রিনশট, লিংক, অডিও বা ভিডিও ফাইল সংগ্রহে রাখা দরকার। এতে অভিযোগ করা অনেক সহজ হবে।

এ ছাড়া ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসে গিয়েও সরাসরি কথা বলার সুযোগ আছে। এর বাইরে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে গিয়েও কথা বলার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি আইন–আদালতে যাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন লোকচক্ষুর ভয়ে ভীত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement