যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় লাশের স্তূপ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৮৪ জন নিহত হয়েছেন। কাতারে যুদ্ধবিরতি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনার মধ্যেই এ হামলা করলো ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলা উত্তর গাজা থেকে তাদের বাস্তুচ্যুত করার যেকোনো পরিকল্পনাকে সহজতর করবে। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) চিকিৎসকদের বরাতে দিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার (১৪ মে) ভোর থেকে উত্তর গাজায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরসহ বেশ কিছু স্থানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে আরও ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি জায়গায় হামলায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। 

আল জাজির বলছে, জাবালিয়ায় উদ্ধারকর্মীরা শিশুদের লাশ সরাতে কেবল মোবাইল ক্যামেরার আলো ব্যবহার করছেন। ধসে পড়া কংক্রিটের স্ল্যাব ভেঙে ফেলা হচ্ছে। 

মধ্যগাজার দেইর এল-বালাহ থেকে আল জাজিরার তারেক আবু আযুম বলেন, ইসরায়েল পরিকল্পিত এবং তীব্রতর সামরিক বিমান অভিযান চালাচ্ছে। এ হামলা হচ্ছে আবাসিক বাড়িগুলোকে লক্ষ্য করে, যাতে পরিবারগুলোকে এ এলাকাগুলো ছেড়ে অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করতে বাধ্য হন। 

তিনি বলেন, এটি একটি অত্যন্ত নাটকীয় বাস্তবতা। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর গাজার শিশু ও বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে যে মানবিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তার তীব্রতা তুলে ধরে এ হামলা। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের এক সংক্ষিপ্ত বিরতির পর ইসরাইলি-আমেরিকান জিম্মি এডান আলেকজান্ডারের মুক্তি দেওয়া হয়। এরপরই কাতার, মিশর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য ইসরাইলি প্রতিনিধিদল দোহায় আছেন। এ অবস্থাতেই এ হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।

বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ আল বলেন, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সকল ক্ষেত্রেই দুর্দান্ত অগ্রগতি হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি ও অবরুদ্ধ গাজায় সাহায্য প্রবেশ পুনরায় শুরু করা নিয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে। 

বিস্তারিত কিছু না জানিয়ে উইটকফ বলেন, তিনি আশা করেন শিগগিরই একটি ইতিবাচক ঘোষণা আসবে।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার পুনর্ব্যক্ত করেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করবে না।

এদিকে গাজায় মার্কিন-ইসরায়েল বিতর্কিত মানবিক সহায়তা পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ। এর পরিবর্তে ইসরায়েলকে গাজার ওপর থেকে দুই মাসের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশগুলো। 

যুক্তরাজ্যের জাতিসংঘ দূত বারবারা উডওয়ার্ড ইসরায়েলকে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সহায়তা পুনরায় প্রবেশে জাতিসংঘকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং মানবিক সহায়তা নিয়ে বলেন, মানবিক সহায়তাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা জঘন্য মানসিকতার পরিচয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫২ হাজার ৯০৮ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি হামলা গাজার বেশিরভাগ স্থান ধ্বংস করে দিয়েছে এবং ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেনে।