রাজধানীতে র‍্যাব পরিচয়ে জিম্মি করে কোটি টাকা ছিনতাই

রাজধানীতে র‍্যাব পরিচয়ে জিম্মি করে কোটি টাকা ছিনতাই

নিজস্ব প্রতিবেদক:

Published : ১৮:৩৯, ১৪ জুন ২০২৫

রাজধানীর উত্তরায় অনেকটা ফিল্মি স্টাইলে র‌্যাব পরিচয়ে নগদ এজেন্টের কাছ থেকে ১ কোটি ৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার (১৪ জুন) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নং রোডে এ টাকা ছিনতাই করে র‍্যাব পরিচয়ে পোশাক পরিহিত ছিনতাইকারীরা।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ বলছে, র‍্যাবের পোশাক পরিহিত ও পরিচয়ে কালো মাইক্রোবাসে করে এসে আকস্মিকভাবে দুটি মোটরসাইকেলের ৪ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। যারা নগদ এজেন্টের নিকটস্থ বাসা থেকে ওই টাকা বহন করে ডিস্ট্রিবিউটর কার্যালয়ে আনছিলেন। 

তাদের মধ্যে ৩ জনকে ওই মোটা অঙ্কের টাকাসহ জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেওয়া হয়। ছিনতাইকারীরা টাকাগুলো রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করাদের উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে চলে যায়।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে ও প্রকৃত ঘটনার অনুসন্ধানে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের নাম্বার ও সিসিটিভি ফুটে সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করছে পুলিশ। মামলা দায়ের না হলেও জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টার পাশাপাশি নগদ এজেন্টের ওই টাকা বহনকারীর ৪ প্রতিনিধিকে হেফাজতে নিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম বলেন, নগদের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়নের বাসা উত্তরা-১৩ সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৩৭ বাসার ৩ তলায় বসবাস করেন। সেখান থেকে হেঁটে পাঁচ মিনিট দূরত্বেই নগদের ডিস্ট্রিবউটিং অফিস। নয়নের বাসায় ছিল টাকাগুলো। 

সেখান থেকে আজ শনিবার (১৪ জুন) নগদের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের ৪ জন মোটরসাইকেলযোগে ওই টাকা আনছিলেন। মোড়েই একটি হায়েস গাড়ি নিয়ে ওঁৎ পেতে ছিল ছিনতাইকারীরা। র‍্যাব সদস্য পরিচয়ে ও র‍্যাবের কটি পরিহিত কয়েকজন তাদেরকে অস্ত্রের মুখে আটকায়। 

৪ জনের মধ্যে কাউসার, লিয়াকত ও আব্দুর রহমান নামে ৩ জনকে পিস্তল দেখিয়ে জিম্মি করে টাকার ব্যাগসহ হায়েস গাড়িতে ওঠানো হয়। বাকিজন ওমর হোসেন লাখের বেশি টাকার আরেকটি ব্যাগসহ দৌড়ে পালাতে সক্ষম হয়। এরপর ছিনতাইকারীরা নগদের প্রতিনিধিদের উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে ফেলে রেখে চলে যায়।

ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার প্রত্যক্ষ ৪ জনকে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছিনতাই হওয়া টাকার পরিমাণ সম্পর্কে তারা জানিয়েছেন, দুটি মোটরসাইকেলে করে টাকা আনা হচ্ছিল। এক মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার। ওমর হোসেন জানিয়েছেন, যে তিনি যে ব্যাগ নিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন তাতে এক লাখের কিছু বেশি টাকা ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত ৩জন জানিয়েছেন, তাদের চড় থাপ্পর মারা হয়েছে। কিন্তু কেনো নগদের ডিস্ট্রিবিউটর নয়নের বাসায় টাকাগুলো রাখা হয়েছিল? বন্ধের দিনে এতো সকালে এতোগুলা টাকা কেনো বাসা থেকে অফিসে নেয়া হচ্ছিল। তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। দুটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে আলাদাভাবে টাকা বহন করা হচ্ছিল জানালেও একটি মোটরসাইকেলে ছিল ১ কোটি ৮ লাখ টাকা সেটাই টার্গেট করাটা সন্দেহজনক।

ডিসি মহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় ভেতরেই ইনফর্মার থাকে। আমরা এখনো জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে ক্লু পেতে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।

ডিসি আরও জানান, নগদের ওই ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের পার্টনার দুইজন। একজন আব্দুল খালেক নয়ন। টাকাটা তারা বাসায় রাখা ছিল। আরেক পার্টনার তারিকুজ্জামান। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তিনি ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়ে এখনো ঢাকা ফেরেননি। আমরা নয়নকে থানায় ডেকেছি। আরও বিস্তারিত  জানার চেষ্টা করছি। তারা কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা! আমরাও আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহায়তায় জড়িত ছিনতাইকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে চেষ্টা করছি।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement