অন্তর্বর্তী সরকারকে ভুল পদক্ষেপ, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্তের বিষয়ে সতর্ক করলেন তারেক জিয়া

Published : ০০:৩৮, ৩১ জুলাই ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক যাত্রাকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এবং ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ ও মৌলবাদের উত্থানের পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, ‘সরকারের যেকোনো ভুল পদক্ষেপ গণতন্ত্রের যাত্রাকে সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ এবং মৌলবাদ মাথা উঁচু করতে পারে। তাই, আমাদের সকলকে, বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
আশুলিয়ার শ্রীপুরে দারুল ইহসান মাদরাসা মাঠে বুধবার (৩০ জুলাই) বিএনপির ঢাকা জেলা শাখা আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে ভার্চুয়াল ভাষণে তারেক রহমান এই মন্তব্য করেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় নৃশংস ঘটনার শিকারদের স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আন্দোলনের সময় আশুলিয়া থানার কাছে শহীদদের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের উল্লেখ করে তারেক বলেন, জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে আশা করেছিল তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার হবে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ কেউ দেশের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে না দিয়ে, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে কাজ করার পরিবর্তে খারাপ কৌশল অবলম্বন করতে পারে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘নির্বাচনী অগ্রাধিকার নির্ধারণে প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা অন্তর্বর্তী সরকার প্রদর্শন করছে কিনা তা নিয়ে জনগণের মধ্যে একটি গুরুতর উদ্বেগ ও প্রশ্ন রয়েছে।’
তারেক আরও সতর্ক করে বলেন, পরাজিত ও পলাতক ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো তাদের রাজনৈতিক ফায়দার জন্য সরকারের কোনো ভুলের অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, শত শত শহীদের রক্তপাতের পরও পতিত, পলাতক, পরাজিত এবং ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো ছায়ায় লুকিয়ে আছে, ফিরে আসার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি সকল রাজনৈতিক দলকে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বিভেদ তৈরি না করার আহ্বান জানান, যাতে দেশের গণতন্ত্র আবার বাধাগ্রস্ত না হয়।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনৈতিকভাবে অনেক কিছু বলা এবং ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং গণতন্ত্রে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু এমন কিছু করবেন না— যা আবারও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষতি করতে পারে।’
বিএনপি নেতা আরও সতর্ক করে বলেন, ছোটখাটো বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় বিরোধ ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনার প্রত্যাবর্তন’র পথ প্রশস্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
তিনি দ্রুত তাদের মতপার্থক্য ভুলে এবং দেশে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার, আমাদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করার এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার আহ্বান জানাই। আসুন একটি সত্যিকারের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করি।’
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাংলাদেশের মানুষ ও মাটির সন্তানদের জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে—এমন ঘটনায় তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিএনপির এই নেতা হতাশা প্রকাশ করেন যে, সরকার এখনও গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে পারেনি।
ক্ষমতায় থাকার জন্য নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পথ বেঁছে নেওয়ার অভিযোগ করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
তিনি বলেন, জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে শেখ হাসিনা যে নৃশংসতা চালিয়েছেন—তার জন্য তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।