ডালাস চলচ্চিত্র উৎসবে মোশাররফ করিম ও জুঁই অভিনীত ‘আবর্ত’

Published : ১৭:৫৯, ৩১ জুলাই ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে আয়োজিত ‘৮ম বেঙ্গলী ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ডালাস ২০২৫’-এ জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আবর্ত–দ্যা সার্কেল’। আন্তর্জাতিক এই উৎসবে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের মধ্যে অন্যতম এই ছবিটি পরিচালনা করেছেন মাহামুদুল হাসান টিপু। ২৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের এই কাজটি ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী দম্পতি মোশাররফ করিম ও রোবেনা রেজা জুঁই। দর্শকপ্রিয় এই জুটিকে একসঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে এমন একটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে—এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করছে। চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেছেন কাজী আসাদ। চিত্রগ্রহণে ছিলেন দানিয়েল ড্যানি, আর শিল্প নির্দেশনা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন থিউফেলাস স্কট। পুরো টিমের প্রচেষ্টা ও নির্মাণশৈলীর কারণে ‘আবর্ত’ এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের উপস্থাপন করতে যাচ্ছে গর্বের সঙ্গে।
‘আবর্ত’ কেবল একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি বাংলাদেশের বাস্তবতা থেকে উঠে আসা এক নারীর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। অভিনেত্রী রোবেনা রেজা জুঁই জানান, “এটি বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলের এক নারীর নীরব সংগ্রাম, সামাজিক ও পারিবারিক চাপের বিরুদ্ধে টিকে থাকার চেষ্টা এবং জীবন নামক এক চক্র ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নির্মিত।” এই নারীর ভেতরকার ঘূর্ণিপাক এবং মুক্তির লড়াই চলচ্চিত্রটির মূল উপজীব্য। আন্তর্জাতিক নির্বাচনে বিশিষ্টতা ডালাস উৎসবে এবার জমা পড়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২৩৮টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র, যার মধ্যে মাত্র ৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয়েছে।
‘আবর্ত’ সেই চারটির একটি। নির্বাচনের দিক থেকে এটি শুধু সৌভাগ্য নয়, বরং বাংলাদেশের নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীদের সক্ষমতারও এক প্রত্যক্ষ স্বীকৃতি। চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে উৎসবের দ্বিতীয় দিন, ২ আগস্ট, স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে, ডালাসের অ্যাঞ্জেলিকা ফিল্ম সেন্টার এন্ড ক্যাফে-তে। একই সেশনে প্রদর্শিত হবে ভারতের কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন-এর জীবনীভিত্তিক ফিচার ফিল্ম ‘পদাতিক’, যা নির্মাণ করেছেন সৃজিত মুখার্জি। এই একই সেশনে ‘আবর্ত’-এর অন্তর্ভুক্তি একধরনের মর্যাদা, কারণ ভারতীয় প্রভাবশালী চলচ্চিত্র ঐতিহ্যের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের একটি ছোট্ট অথচ হৃদয়স্পর্শী গল্প জায়গা করে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি এখন আর শুধু দেশীয় দর্শকদের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। গত কয়েক বছরে একাধিক স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্র ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। ‘আবর্ত’ সেই ধারাবাহিকতার একটি শক্তিশালী ধাপ। এটি শুধু একজন নারীর জীবনের গল্প নয়, বরং একটি সমাজব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি—যেখানে সংগ্রাম, নিঃশব্দ প্রতিবাদ এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা একইসঙ্গে চিত্রায়িত হয়েছে। মোশাররফ করিম ও জুঁইয়ের মতো তারকা শিল্পীদের অভিনয় সেই বার্তাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। ‘আবর্ত’ শুধুমাত্র একটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের ঘটনা নয়, এটি বাংলাদেশের স্বাধীন চলচ্চিত্রচর্চার এক গর্বিত প্রতিনিধিত্ব।
ডালাসের মঞ্চ থেকে যে আলো ছড়িয়ে পড়বে, তা হয়তো ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালগুলোতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের উপস্থিতি আরও দৃঢ় করবে। একই সঙ্গে, নবীন নির্মাতাদের জন্য এটি হবে এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা। এই অর্জন শুধু নির্মাতা বা অভিনয়শিল্পীদের নয়, এটি বাংলাদেশের শিল্প-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের একটি সম্মান।
S