হোসেনি দালানের আদ্যোপান্ত

হোসেনি দালানের আদ্যোপান্ত

রাজধানী ডেস্ক:

Published : ১১:১০, ১৭ জুলাই ২০২৪

হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শাহাদাত বরণ করেন মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.)। এই শোক ও স্মৃতিকে স্মরণ করে সারাবিশ্বে মুসলমানরা আশুরা পালন করেন। 

এরই স্মরণে ১৭ শতকে সম্রাট শাহজাহানের আমলে নির্মাণ করা হয় হোসেনি দালান। এটি পুরান ঢাকার চাঁনখারপুল হোসেনি দালান রোডে অবস্থিত।প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক এই হোসেনি দালান ইমামবাড়া নামেও পরিচিত। আবার অনেকে হুসনি দালান বা হোসায়নি দালানও বলেন। 

এটি মূলত শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের মসজিদ ও কবরস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং শিয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব মহররম পালনের প্রধান কেন্দ্রভূমি।

‘হায় হোসেইন, হায় হোসেইন’ মাতমের মধ্য দিয়ে পবিত্র আশুরার ঐহিত্যবাহী তাজিয়া মিছিল এখান থেকেই বের হয়। এছাড়াও শিয়া সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় আচার পালন করা হয়।

হোসেনি দালান বা ইমামবাড়ার দক্ষিণাংশে রয়েছে একটি বর্গাকৃতির পুকুর ও উত্তরাংশে রয়েছে কবরস্থান। দালানটি সাদা বর্ণের, এর বহিরাংশে নীল বর্ণের ক্যালিগ্রাফির কারুকাজ রয়েছে। একটি উঁচু মঞ্চের ওপর ভবনটি নির্মিত। মসজিদের ভেতরেও সুদৃশ্য নকশা আছে। 

এটি মোগল সম্রাট শাজাহানের আমলে নির্মিত হয় বলা হলেও এর নির্মাণকাল নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।

হোসেনি দালান বা ইমামবাড়ার প্রাচীরের শিলালিপি থেকে জানা যায়, শাহ সুজার সুবেদারির সময় তার এক নৌ-সেনাপতি মীর মুরাদ এটি নির্মাণ করেন। হিজরি ১০৫২ সনে অর্থাৎ ১৬৪২ খ্রিস্টাব্দের প্রথমে তাজিয়া কোনা নির্মাণ করেন তিনি।

পুরো স্থাপত্য তারই পরিবর্ধিতত রূপ বলে বিভিন্ন নথিতে পাওয়া যায়। তবে কিছুকাল পর এটি ভেঙে যায় এবং নায়েব-নাজিমরা নতুন করে আবার নির্মাণ করেন।

১৮৩২ সাল পর্যন্ত আদি স্থাপনাটি টিকে ছিল। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে দুই দফায় এর সংস্কার হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভবনটি প্রায় বিধ্বস্ত হয়। পরে খাজা আহসানউল্লাহ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে এটি পুনঃনির্মাণ করেন।

২০১১ সালে ইরান সরকারের উদ্যোগে পুরো হোসেনি দালানের সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। ইরান সরকার এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। ইরানের স্থপতিবিদ ও শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ফলে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনার বাহ্যিক রূপ ও নান্দনিকতা এখনকার হোসেনি দালানের প্রতিফলিত হয়েছে।

১০ মহররম আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালানে শিয়া মুসলমানরা নানা আয়োজন করে থাকেন। তাদের আগমণে ইমামবাড়া কানায় কানায় ভরে যায়। আশুরার দিন তার রোজা রাখেন। পরে সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করেন। আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালান থেকে প্রতিবছর তাজিয়া মিছিল বের হয়।

আক্তার হোসেন রাব্বি নামের এক ব্যক্তি জানান, ১০ মহররম পুরো বিশ্বের মুসলমানদের কাছে একটি বিশেষ দিন। এ দিনে মহান আল্লাহ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আবার এ দিনেই ধ্বংস করবেন। এ দিনে হযরত মোহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনকে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য তার কষ্ট অনুভব করার জন্য আমরা তাজিয়া মিছিলে নিজের পিঠে আঘাত করি। 

প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির সময় রাস্তায় না নেমে তাজিয়া মিছিল সীমিত পরিসরে মসজিদের (হোসেনি দালান) ভেতরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। 

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement