আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক:

Published : ২১:২১, ১৫ জুন ২০২৫

জনস্বার্থে ন্যায্য ও সময়োপযোগী প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে দেশের তরুণ সমাজের কণ্ঠ আরও একবার গর্জে উঠেছে। “আর দেরি নয়, তামাক নিয়ন্ত্রণে এখনই পদক্ষেপ দরকার”, এমন দৃঢ় বার্তা নিয়ে শনিবার (১৪ জুন) সকাল ১১টায় ঢাকার কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আয়োজিত “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে তরুণদের করণীয়” শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নেয় তামাক বিরোধী তরুণ ফোরাম।

কর্মশালায় তারা তামাকজাত পণ্যের ভয়াবহতা তুলে ধরেন এবং আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাসের জোর দাবি জানান।

অনুষ্ঠান্ সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি। তামাক কোম্পানির কূটকৌশল নিয়ে তিনি বলেন “‘বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশই তরুণ-তরুণী। তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট হচ্ছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে তামাকে আসক্ত করে ব্যবসা বাড়ানো। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচিত তামাক কোম্পানির ছোবল থেকে তরুণদের সুরক্ষা প্রদান করা। এর জন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনীর কাজ দ্রুত চূড়ান্ত করতে হবে। 

“বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ্য মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন বলে জানান তামাক বিরোধী তরুণ ফোরামের আহ্বায়ক আশরাফিয়া জান্নাত । তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ীদের প্রায় অর্ধেক (৪৯.০%) রেস্তোরাঁয় এবং ৪৪.০% গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানে আক্রান্ত হন। নারী ও শিশুরা এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পরোক্ষ ধূমপান নারীদের জন্য গর্ভপাত, মৃত সন্তান প্রসব, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অপরদিকে, শিশুদের ক্ষেত্রে এটি শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা, অ্যাজমা, বুদ্ধি ও শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি নবজাতকদের ক্ষেত্রে হঠাৎ মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। অতএব, নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্র, রেস্তোরাঁ ও গণপরিবহণে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করার জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি” 

তরুণ ফোরামের সদস্য মাহমুদুল হাসান হামিম তার বক্তব্যে বলেন, “আজকাল তরুণ সমাজ তামাক পণ্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য হুমকিস্বরূপ। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছর) মধ্যে ৬.৯% শিক্ষার্থী কোনো না কোনো ধরনের তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে থাকে, যার মধ্যে ছেলেদের হার ৯.২% এবং মেয়েদের হার ২.৮%। এই চিত্র অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তামাকের ভয়াল ছোবল থেকে তরুণ প্রজন্মকে রক্ষা করতে আমরা, দেশের সচেতন তরুণ সমাজ, সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনীগুলো যেন দ্রুত পাস করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

কর্মশালায় নারী মৈত্রীর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর নাসরিন আকতার প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তরুণদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে তামাকের কারণে বছরে ১ লক্ষ্য ৬১ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। মৃত্যুর এই মিছিল ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করা জরুরি। সংশোধনীগুলোর মধ্যে রয়েছে-  পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা শতকরা ৯০ ভাগ করা ।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement