রংপুরের স্থাপিত হলো ডপলার রাডার, পাওয়া যাবে দুর্যোগের আগাম তথ্য

Published : ১৭:৫৯, ১২ মে ২০২৫
রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ে স্থাপিত নতুন ডপলার রাডারের যাত্রা শুরু হয়েছে। ফলে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে খুলে গেলো আবহাওয়ার তথ্য জানার নতুন দুয়ার। এই ডপলার রাডার স্থাপনের মাধ্যমে দুর্যোগের আগাম তথ্য পাবেন উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ।
রোববার (১১ মে) দুপুর ১২টায় রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারে স্থাপিত ডপলার রাডার স্টেশনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এটি উদ্বোধন করেন।
এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পরামর্শদাতা ইয়োশিহিসা উচিদা এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের উপ-পরিচালক আহমেদ আরিফ রশিদ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান।
বাংলাদেশ আবহাওয়া বিভাগের পরিচালক মো. মোমেনুল ইসলাম বলেন, ডপলার রাডার কৃষিনির্ভর উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এর মাধ্যমে ৪৫০ কিলোমিটার এলাকার মানুষ আগাম আবহাওয়ার তথ্য জানতে পারবেন। এতে করে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ থাকায় দুর্যোগে কমবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
ডপলার রাডার স্থাপনের কাজটি তত্ত্বাবধান করছে জাপানের সিমিজু কর্পোরেশন। এ রাডার স্টেশনের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারুবিনি কর্পোরেশন। জাপান সরকারের অনুদানে রংপুর আবহাওয়া অফিসে নতুন ডপলার রাডার স্থাপনের কাজ ২০১৬ সালে শুরুর কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা পিছিয়ে যায়। মূলত ২০১৬-২০২১ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০২১-২২ অর্থবছর থেকে রাডার স্থাপনের প্রকল্পে গতি আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে রাডার স্থাপনের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ থেকে। রংপুর আবহাওয়া দপ্তরে ডপলার রাডার স্টেশনটি জাপান সরকারের অনুদানে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করার কথা থাকলেও পরবর্তীতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকা। যার বেশি অংশই দিয়েছে জাপানের দাতাসংস্থা জাইকা।
নতুন এ রাডারের মাধ্যমে মেঘের অবস্থান, গতি, দিক, তাপমাত্রা জানা যাবে। বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হবে। রেডজোনে অবস্থিত রংপুরে ভূমিকম্প ও বড় ধরনের বন্যার তথ্য মিলবে। আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে কৃষকরা ফসলের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। সেই সঙ্গে রংপুরের আবহাওয়ার অবস্থা ও পরিবর্তনজনিত কারণগুলো গবেষণা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর কলেজ রোড মাস্টারপাড়া এলাকায় ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অধীনে আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়। আড়াই একর জমির ওপর নির্মিত এ আবহাওয়া কেন্দ্রে জাপান সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৯ সালে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে কনভেনশনাল রাডার স্থাপন করা হয়।
এ রাডারের সাহায্যে ভূমিকম্প পরিমাপ, দুর্যোগের পূর্বাভাস ও প্রতিদিনের আবহাওয়া পরিস্থিতি ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে প্রদান করা হতো। রাডারটির আয়ুষ্কাল ছিল ১০ বছর। কিন্তু ২০০৭ সালে রাডারে ত্রুটি ধরা পড়ে। স্থানীয় প্রকৌশলীদের প্রচেষ্টায় ২০১২ সাল পর্যন্ত রাডারটিকে সক্রিয় রাখা সম্ভব হয়েছিল।
এরপর থেকে ১৩ বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের একমাত্র রাডারটি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়ার পূর্বাভাস না পাওয়ায় প্রায় সাড়ে ৪০০ কিলোমিটার এলাকার মানুষ আগাম প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হন। আগাম বার্তা পেতে ঢাকাসহ অন্যান্য আবহাওয়া অফিসের তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয় বেশি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রংপুর ও এর আশপাশের কৃষিনির্ভর এলাকাগুলো। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়।
এমন পরিস্থিতিতে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে আবহাওয়া সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে নতুন ডপলার রাডারটি স্থাপন করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের আবহাওয়া অফিসগুলোর মধ্যে একমাত্র রংপুরে ছিল রাডার এবং ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র। রাডারটি নষ্ট হওয়ায় আবহাওয়ার অনেক তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল এই অঞ্চলের মানুষ। তবে বর্তমানে নতুন রাডারটি স্থাপন হওয়ায় রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মানুষ সঠিক সময়ে আবহাওয়ার সঠিক তথ্য পাবে।
রংপুর আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, নতুন স্থাপিত ডপলার রাডারের মেয়াদকাল ১৫ বছর। এই রাডারটি উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি কৃষির সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমাদের কোটি কোটি টাকার ফসলহানি হয়। বজ্রপাতের কারণে দিন দিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস না থাকায় মৌসুমী রোগব্যাধীও বাড়ছে। এখানে ডপলার রাডার স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
বিডি/ও