ঘুম থেকে উঠে দেখেন গোয়ালঘর শূন্য!

জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখেছিলেন ছোট্ট একটা গরুর খামার করার মাধ্যমে। দিনমজুরির পাশাপাশি গরুর দুধ বিক্রি করে সংসার সামলাবেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন। সে স্বপ্ন ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন মেনারুল ইসলাম। ৫ বছরে একটি গরু থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৪টি গাভি ও ৩টি বাছুরে। 

দুধ বিক্রির টাকায় চলতো তাদের সংসার, সন্তানদের পড়াশোনার খরচ। কিন্তু রোববার (৬ জুলাই) রাতে সবকিছু যেন মহুতের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেল।

ঘরের তালা ভেঙে চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায় গোয়ালঘরের ৬টি গরু। শূন্য হয়ে যায় মেনারুলের স্বপ্নের খামার।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ঝাঁকুয়াপাড়া গ্রামের মেনারুল ইসলাম এখন চোখে জল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে গোয়ালঘরের সামনে। ৫ বছরে তিলে তিলে গড়ে তোলা শ্রমের ফল যেন মুহূর্তেই উধাও। 

জানা যায়, উপজেলার কুর্শা ঝাঁকুয়াপাড়া গ্রামের এমাজ উদ্দিনের ছেলে মেনারুল ইসলাম পেশায় দিনমজুর। তার একার আয়ে চলে ছয় সদস্যের সংসার। জমিজমা বলতে পৈতৃক সম্পত্তির ভাগে পাওয়া বসতভিটার ১৫ শতক। ৫ বছর আগে একটি গাভি ক্রয় করে লালন পালন শুরু করেন। ধীরে ধীরে ৪টি গাভি আর ৩টি বাছুরের খামারে পরিণত হয়। 

দিনমজুরি আর গাভির দুধ বিক্রির টাকায় ভালোয় চলছিল তাদের সংসার। রোববার দিবাগত রাতে খামারে গাভিগুলোকে খাবার দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে মেনারুল ইসলাম। ঘুম থেকে সকালে উঠে দেখেন দরজার তালা কাটা। ভেতরে গিয়ে দেখেন গোয়ালে নেই গরু। 

মেনারুল ইসলাম বলেন, কষ্ট করে গরুগুলো লালন-পালন করা হছিল। দুধ বেচে ছেলে-মেয়েক স্কুলে পাঠাইছি, ওদের বই ক্রয় করে দিয়েছি। এত কষ্ট করছি। এখন সব শেষ। যারা নিয়া গেছে তারা জানে না, গরুগুলো আমার সন্তান ছিল। এখন কীভাবে দিন চলবে বুঝতেছি না। তার চোখে জল, গলায় কাঁপন, পাশে বসা স্ত্রীও নির্বাক। 

মেনারুলের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, চোরেরা ফকির বানে দিল হামাক। বাচি থাকার সম্বল কোনা চুরি করি নিল। চোখে এখন আন্ধার দেখছি। এমন ঘটনার পর গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। 

এলাকাবাসী বলেন, এর আগেও চুরি হয়েছে। তবে এমন ক্ষতির শিকার কেউ হয়নি।

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ ফারুক বলেন, ঝাঁকুয়াপাড়ায় খামার থেকে গরু চুরি ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশের একটি টিম সেখানে গিয়েছে। গরু উদ্ধারে চেষ্টা করা হচ্ছে।