প্রশংসায় ভাসছে ব্যতিক্রমী গল্পের নাটক কেয়া পায়েল এর- ’সম্মান’

প্রশংসায় ভাসছে ব্যতিক্রমী গল্পের নাটক  কেয়া পায়েল এর- ’সম্মান’

TheBusinessDaily

Published : ০২:৩৬, ২৪ জুন ২০২৫

নাটকের কাঠামো: গল্পের গভীরতা নির্মাণের কৌশল

নাটকটির মূল কাহিনি রচিত হয়েছে লেখক আকবর হায়দার মুন্না গল্প অবলম্বনে, আর চিত্রনাট্যকার লিমন আহমেদ সেই কাহিনিকে নাট্যরূপ দিয়েছেন নিপুণ হাতে। নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন তপু খান, যিনি পূর্বেও সমাজ সচেতন গল্প নিয়ে কাজ করেছেন, তবেসম্মানসম্ভবত তার পরিচালনার অন্যতম সেরা সংযোজন।

নাটকটি প্রচারিত হয়েছে ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে অনলাইনে উন্মুক্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় প্রশংসার ঢল।

এখানে শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খানযিনি নিজেই একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। তার চোখের ভাষা, সংলাপের ভঙ্গি, চলাফেরার অভিজাত গাম্ভীর্য, সব মিলিয়ে তিনি যেন শিক্ষক চরিত্রটির প্রতিমূর্তি। তার ছাত্রের ভূমিকায় রয়েছেন ফারহান আহমেদ জোভানতরুণ এই অভিনেতা তার সীমিত অভিজ্ঞতার গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়ে এক পরিণত, সংযত সংবেদনশীল চরিত্রের রূপদান করেছেন। পাশে ছিলেন কেয়া পায়েলসবসময়ই সাবলীল, প্রাণবন্ত, এবং প্রাসঙ্গিক।

সম্মান যেখানে পরিণত হয় শ্রদ্ধার উৎসে

নাটকটি যে শুধু একটি শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের গল্প তা নয়, এটি আসলে এক মূল্যবোধের গল্প। সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত প্রভাবশালী একটি পেশার প্রতি ক্রমশ কমে আসা শ্রদ্ধাবোধের বিরুদ্ধে একটি সাহসী শান্ত প্রতিবাদ।

নাটকে আমরা দেখি, কিভাবে একটি সৎ নিঃস্বার্থ মানুষযিনি শিক্ষকতা ছাড়া আর কিছু জানেন নাতার ছাত্রের চোখে একজন নায়ক হয়ে ওঠেন। এখানেসম্মানশুধু বাহ্যিক আনুগত্য নয়, বরং এক আত্মিক উপলব্ধি।

প্রতিক্রিয়ার ঢল: দর্শক যখন গলা ভিজিয়ে লেখে

নাটকটি প্রকাশের পর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যেই লাখের বেশি ভিউ অতিক্রম করেছে। এই সংখ্যা শুধুই পরিসংখ্যান নয়, এটি এক সামাজিক উপলব্ধির প্রতিচ্ছবি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ১৬ হাজারের বেশি লাইক পড়েছে, কিন্তু একটিও ডিসলাইক নেইযা ইউটিউবের নাট্যকনটেন্টে এক বিরল ঘটনা।

কমেন্ট ঘরে এক দর্শক লেখেননাটকটা দেখার সময় চোখে পানি চলে এসেছে। এমন শিক্ষকেরা সমাজে থাকলে আমরা অন্যরকম বাংলাদেশ পেতাম।

ভারতীয় দর্শক কৌস্তব সান্ত্রা লেখেন

আমি সাত বছর ধরে বাংলাদেশের নাটক দেখি। কিন্তু এই নাটক মনে হলো সীমান্ত পেরিয়ে হৃদয়ে এসে আঘাত করেছে।

মিশরে বসবাসকারী রবিউল ইসলাম নয়ন নাটকটি দেখে মন্তব্য করেনএই নাটক শুধু নাটক নয়, এটি একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা। চোখের পানি ধরে রাখা যায়নি। এমন নাটক বারবার দেখতে চাই।

এইসব মন্তব্য প্রমাণ করে—‘সম্মানশুধু গল্প বলেনি, দর্শকের আত্মায় এক অনুরণন সৃষ্টি করেছে।নাটকের একটি মুহূর্তে শিক্ষক চরিত্রটি বলেন

শিক্ষক শুধু পাঠ্যবই শেখান না, তারা শেখান জীবন কীভাবে বাঁচতে হয়।

এই একটি সংলাপ যেন নাটকটির সারাংশ হয়ে ওঠে। সমাজের প্রতিটি মানুষকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়, কাকে আমরা সম্মান করি, কেন করি, এবং আদৌ করছি কি না।এই ঈদে অনেক নাটক এসেছে, অনেক তারকাখচিত কনটেন্ট এসেছে, কিন্তুসম্মানতার গল্প দিয়ে নয়, মানবিকতা দিয়ে জয় করে নিয়েছে হৃদয় এটি প্রমাণ করেছে, গল্পে যদি থাকে সত্যতা, নির্মাণে থাকে আন্তরিকতা, আর অভিনয়ে থাকে আত্মাতবে তা দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়েই নেয়।সম্মাননাটকটি কেবল বিনোদন নয়, এটি এক সামাজিক দর্পণ। আমাদের চারপাশের শিক্ষকদের অবস্থা, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অবক্ষয়, এবং সে জায়গা থেকে উত্তরণের চেষ্টাই এই নাটকের মূল প্রেরণা।

এই নাটকটির সাফল্য আমাদের শেখায়ভালো গল্প আজও মানুষ দেখে, শ্রদ্ধা দেয়, শেয়ার করে।
সম্মান পেতে হলে আগে সম্মান দিতে শিখতে হয়, এই বার্তাটিই সম্মান নাটকের সবচেয়ে বড় জয়।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement