মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারি

Published : ১৪:২৫, ১৩ মে ২০২৫
নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন এবং রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আলাদা করা জরুরি। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং গতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেই বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ গঠন করা হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে সংসদ বিলুপ্ত অবস্থায় রয়েছে, তাই সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি জরুরি পরিস্থিতিতে এই অধ্যাদেশ জারি করেছেন।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব পদে “উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা” নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি রাজস্ব নীতি প্রণয়নে যুক্ত বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করে। একইভাবে, মৌলিক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, পরিসংখ্যান, আইন, প্রশাসনসহ অন্যান্য খাতের অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও রাজস্ব সংক্রান্ত ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সুযোগ রাখা হয়নি।
এছাড়া জনবল পদায়নে অধ্যাদেশে নির্দিষ্ট কোনো কমিটির উল্লেখ না থাকায় স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের মতে ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওপর নীতি বিভাগের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ তৈরি করে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব নিয়োগে ২০ বছরের সরাসরি রাজস্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে দায়িত্ব দেওয়ার পরিবর্তে, যে কোনো অভিজ্ঞ সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগে ‘অগ্রাধিকার’ দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও একটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে—প্রথমে খসড়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদগুলো শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের জন্য নির্ধারিত থাকলেও, চূড়ান্ত অধ্যাদেশে সেখানে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডার কর্মকর্তাদেরও সুযোগ রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশ কার্যকরের পরদিনই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে বিসিএস কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তা, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অংশগ্রহণে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়। এই ব্যানারে সোমবার সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ নয় ঘণ্টা আলোচনা হয় এবং মঙ্গলবার থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
এর আগে, ৮ মে বাংলাদেশ ট্যাক্স ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) ও ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশন (ডিটিবিএ) পৃথক বিবৃতিতে এনবিআর বিলুপ্তির পরিবর্তে কাঠামোগত সংস্কারের দাবি জানায়। পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহে আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের বিভিন্ন সংগঠন জরুরি সাধারণ সভা (ইজিএম) করে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানায়।