ডিএল রায়ের স্মরণে শিল্পকলায় ‘সুরের দয়াল রায়’

Published : ১৫:৫৪, ১৮ মে ২০২৫
‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’-এই গানের প্রতিটি পঙ্ক্তিতে আজও মিশে আছে এক জাতির আত্মপরিচয়। সেই গান যার স্রষ্টা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (ডিএল রায়)- কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা।
তার প্রয়াণ দিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগ আয়োজন করে এক অনন্য গীতিনাট্য ‘সুরের দয়াল রায়’, যা পরিবেশন করেন দেশীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র ‘ভৈরবী গীতরঙ্গ দল’। এই প্রযোজনার ভাবনা ও নির্দেশনায় ছিলেন নাট্যনির্দেশক ইলিয়াস নবী ফয়সাল।
প্রযোজনাটির নির্দেশক ইলিয়াস নবী ফয়সাল বলেন-‘আমি বরাবরই বিশ্বাস করি, সংগীতের ভেতর দিয়ে ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখা যায়। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় শুধু গানের মানুষ নন- তিনি ছিলেন এক মুক্তচিন্তার বাহক। তার গান ছিল প্রতিবাদ, প্রেম, দেশপ্রেম আর সাহসের প্রতীক।
তাই এই গীতিনাট্যে আমি চেয়েছি তার সুরের দ্যুতির ভেতর দিয়ে দর্শক যেন ফিরে যেতে পারেন সময়ের আর এক গহ্বরে, যেখানে গান আর দেশ একাকার হয়ে আছে।’
শিল্পকলা অ্যাকাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৬:৪৫-এ দর্শকে দর্শকে পূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে, দেন উপ-পরিচালক মো. জসীম উদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন সুরের এক রূপকার। তাঁর গান আজও আমাদের আত্মাকে ছুঁয়ে যায়, সেই সব গান ও সুর মঞ্চে নিয়ে আসতে পেরে আমরা বেশ আনন্দিত। ’
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ভৈরবী রাগ ও ত্রিতাল তালে ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে/প্রকৃতি সতীরে সাজিয়ে দাও’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এরপর একে একে পরিবেশিত হয়—
- ‘ঘন তমসাবৃত অম্বরধরণী’
- ‘আজি এসেছি বঁধু হে’
- ‘বেলা বয়ে যায়’
- ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কি সংগীত ভেসে আসে’
- ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’
- ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’— ইত্যাদি সংগীতের ছায়ায় নৃত্য ও আবৃত্তির মনোমুগ্ধকর মেলবন্ধন।
সবশেষে মঞ্চ আলো করে উঠে আসে রোমান্টিক ও স্বপ্নিল এক গীতিকবিতা- “আমরা মলয় বাতাসে ভেসে যাব শুধু/কুসুমের মধু করিবো পান,/ঘুমাব কেতকি সুবাস শয়নে/চাঁদের কিরণে করিব স্নান।” তখন হলজুড়ে নেমে আসে এক অদ্ভুত নিরবতা, শ্রোতা-দর্শক যেন হারিয়ে যান সেই সুরের নদীতে।
এই শিল্পযাত্রায় অংশ নেন দীপ্ত, কণা, রিয়া, আফনান, মেরাজ, সোনিয়া, লামিয়া, আনা, মাহতাব, হৃদয়, তন্দ্রা, অর্পিতা, বৈশাখী, আতিশা, অঙ্কিতা, আরিফ, দিয়া, রাজিব, ধ্রুব, অর্ক, জিতু, আইরিন, ইসতিয়াক, ইতি, মন, জিহাদ, মহসিন, মজতোবা, নন্দিতা, নিয়ামত, নোবেল, অর্থী, প্রত্যাশা, পারমিতা, পার্থ, প্রীতম, নদী, রিয়ান, সুব্রত, তীর্থ, ইশিকা, তুর্জ, তুষার, অরিত্র, সুজয়সহ আরও অনেকে।
শ্রোতা-দর্শকের প্রশংসায় মুখর হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির থিয়েটার হল। দর্শক শুধু গান শোনেননি— তারা যেন এক সাংস্কৃতিক যাত্রায় পা রেখেছিলেন, যেখানে মিলেছিল ইতিহাস, দেশপ্রেম, হৃদয় ও সাহিত্যের অপূর্ব মেলবন্ধন।
বাংলা গানের এই পঞ্চ-স্থপতির প্রতি এমন অন্তরগ্রাহী শ্রদ্ধাঞ্জলি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একজন স্রষ্টা বেঁচে থাকেন তাঁর সৃষ্টিতে, আর সেই সৃষ্টি যখন এমন জীবন্ত রূপ পায়, তখন শিল্প হয়ে ওঠে স্মরণীয় ও চিরন্তন।
আর ভৈরবীর এই অভিনব উপস্থাপন যেন হয়ে রইল সুর, নাট্য ও ভালোবাসার এক অমর গাথা।
বিডি/ও