সুন্দরগঞ্জে পুত্রহারা পিতাকে হয়রানির অভিযোগ

সুন্দরগঞ্জে পুত্রহারা পিতাকে হয়রানির অভিযোগ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

Published : ১৭:৪৬, ২৮ জুন ২০২৫

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় এক বছর আগের মিমাংসিত ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে পুত্রহারা এক পিতাকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ভূক্তভোগি ব্যক্তি ওই ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

ভূক্তভোগির অভিযোগ ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২ বছর আগে উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা গ্রামে হোসেন আলীর ছেলে মতিয়ার রহমানের সাথে একই গ্রামের পিয়ার হকের মেয়ে পারভীন বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারভীন বেগম ও তার পরিবারের সাথে মতিয়ার রহমানের বিরোধ সৃষ্টি হয়। 

গত বছরের এপ্রিল মাসে মতিয়ার রহমান শ্বশুর বাড়িতে তার স্ত্রীকে আনতে গেলে পারভীন বেগমের পরিবারের লোকজন মিলে তাকে বিয়ের দেনমোহরানা বুঝে দিয়ে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করে। স্ত্রীকে তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালে শ্বশুর পিয়ার হক ও শ্যালক রফিকুল ইসলামসহ পরিবারের লোকজন মতিয়ার রহমানের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে চরম অপমানসহ বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানী ঘটায়। 

পরে গাছের সাথে বেঁধে রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়। এতে মতিয়ার রহমান চরমভাবে লজ্জিত হয়ে অপমান সইতে না পেরে ওই দিন রাতে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি গ্রহণ করলে পিয়ার হক ও রফিকুল ইসলাম স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে হোসেন আলীকে আপোষ-মিমাংসার প্রস্তাব দেয়। 

এরপর ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে রংপুরে কাউনিয়া উপজেলার ভাইয়ারহাট নামক স্থানে রফিকুল ইসলামের নানা হবিবর রহমানের বাড়িতে আপোষ-মিমাংসা করা হয়। 

ওই বৈঠকে লাটশালা ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য সুজন মিয়া, শামছুল কামার, বাবলু মিয়া, বাহারুল ইসলাম, নুরুল আমীন, একরামুল হক, রফিকুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য ও জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতি মাইদুল ইসলামসহ ১২/১৩ জন সালিশে উপস্থিত থেকে বিষয়টি আপোষ করেন। 

বৈঠকে উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় হোসেন আলীকে। এছাড়াও বিভিন্ন খরচ বাবদ হোসেন আলীর শ্যালক নায়েব আলীকে ৫০ হাজার টাকা দেয়। 

পরবর্তীতে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে প্রদত্ত ক্ষতিপূরণ আড়াল করে হোসেন আলীকে চাঁদা প্রদানের অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে হোসেন আলীকে বিপদে ফেলতে রফিকুল নানান ষড়যন্ত্র করছেন বলে জানান এলাকাবাসি। 

এ ব্যাপারে লাটশালা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সুজন মিয়া বলেন, মতিয়ার রহমানের আত্মহত্যার বিষয়টি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে ভাইয়ারহাটে হবিবর রহমানের বাড়িতে মিমাংসা করা হয়। সেখানে ৬ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় ছেলের বাবাকে। 

লাটশালা ওয়ার্ডের জামায়াতের বর্তমান সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মাইদুল ইসলাম বলেন, রফিকুল ক্ষতিপূরণ দিয়ে এখন চাঁদা প্রদানের অভিযোগ করছেন। 

রফিকুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে সালিশ বৈঠকে চাঁদা দিয়েছেন, না ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান।

তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, একটি আত্মহত্যার বিষয় সালিশ বৈঠকে মিমাংসা হয়েছে শুনেছি। বৈঠকে ছিলাম না। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement