হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ, মাথায় টুপি, বেডে শুয়ে আছেন নতুন বর। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নববধূ পান পাতায় মুখ ঢেকে তাকে প্রদক্ষিণ করছেন। পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের সঙ্গে মালাবদল ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে হাসপাতালের বেডেই সম্পন্ন হলো বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
ঢাকার কাছাকাছি মানিকগঞ্জ জেলা শহরের চানমিয়া লেনের বাসিন্দা অরবিন্দ সাহার ছেলে আনন্দ সাহা এবং ঘিওরের বানিয়াজুড়ি এলাকার স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অমৃতা সরকারের হাসপাতালের বেডে বিয়ে দেশের মধ্যমেয়াদি সংবাদে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং অন্যান্য রোগীরাও এ বিয়ের সাক্ষী ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের এই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
পরিবারের তথ্য অনুযায়ী, আনন্দ সাহা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তার দুই হাত এবং এক পায়ের হাড় ভেঙেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোমরের হাড়ও। চিকিৎসকরা জানান, পুরোপুরি সুস্থ হতে তার অন্তত আরও তিন মাস সময় লাগতে পারে।
দূর্ঘটনার কারণে পূর্বনির্ধারিত বিয়ের আয়োজন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে হাসপাতালের বেডেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরিবারের অনুরোধের ভিত্তিতে হাসপাতালের অব্যবহৃত একটি ফ্লোর পরিষ্কার করে স্বল্প পরিসরে আয়োজনটি করা হয়েছে। হাসপাতালের মেডিকেল এন্ড ইউনিট প্রধান ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “রোগীর পরিবার ও নতুন দম্পতির স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা সহায়তা করেছি।”
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, আনন্দ সাহা ৭ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে সংঘটিত দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। প্রথমে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন, পরে মানিকগঞ্জের আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন।
পরিবার জানায়, দুর্ঘটনার আগে ১১ জুলাই দুই পরিবার মিলে আনন্দ ও অমৃতার বিয়ে ঠিক করেছিলেন। মূলত অসুস্থ বর এবং পরিবারের সহায়তার প্রয়োজনের কারণে ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের বেডেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।
বিয়েতে উপস্থিত হাসপাতালের চিকিৎসক, রোগী ও কর্মীরা জানান, “আমরা যেন বিয়ে বাড়ির অংশ হয়ে উঠেছিলাম। আনন্দ ও অমৃতার জন্য হাসপাতালে আনন্দময় মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে আনন্দ সাহার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং তার পরিবার ও নববধূ দুজনই একে অপরের পাশে থাকতে সক্ষম হয়েছেন।