শেফালির আকস্মিক মৃত্যুর তদন্তে বেরিয়ে এলো বিস্ময়কর তথ্য 

শেফালির আকস্মিক মৃত্যুর তদন্তে বেরিয়ে এলো বিস্ময়কর তথ্য 

বিনোদন ডেস্ক:

Published : ১৮:৪৪, ২৯ জুন ২০২৫

বলিউড অভিনেত্রী ও মডেল শেফালি জারিওয়ালার আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক তার ভক্ত ও সহকর্মীরা। মুম্বাইয়ে নিজ বাসভবনে শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

পরে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে অভিনেত্রীর মৃত্যুতে চলমান তদন্তে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেফালি দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টি-এজিং থেরাপির অধীনে ছিলেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো এবং বয়সের ছাপ কমানোর লক্ষ্যেই তিনি এই চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন। 

অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছে, গত ৫-৬ বছর ধরে তিনি অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, যার মধ্যে ছিল নিয়মিত ভিটামিন ‘সি’ ও গ্লুটাথায়োন ইনজেকশন। 

তবে চিকিৎসকদের মতে, গ্লুটাথায়োন মূলত শরীর থেকে টক্সিন দূর করা এবং ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি কসমেটিক ওষুধ, যার হৃদপিণ্ডের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। 

এক চিকিৎসক বলেন, ‘এই ধরনের চিকিৎসার সঙ্গে হৃদরোগের সরাসরি সম্পর্ক নেই। মৃত্যুর কারণ অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসা কিনা, তা নিশ্চিতভাবে বলা যাবে ময়নাতদন্ত এবং ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর।’

জানা যায়, ‘গত ২৭ জুন বাড়িতে একটি পূজা ছিল, যার কারণে শেফালি উপবাস করছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি সেদিন দুপুরে অ্যান্টি-এজিং ওষুধের একটি ইনজেকশন নিয়েছিলেন। এই ওষুধগুলো তাকে কয়েক বছর আগে একজন ডাক্তার দিয়েছিলেন এবং তখন থেকেই তিনি প্রতি মাসে এই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পুলিশি তদন্তে এ পর্যন্ত জানা গেছে যে এই ওষুধগুলোই কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের একটি প্রধান কারণ হতে পারে।’

ঘটনার সময়ক্রম অনুসারে, শেফালির স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিল ২৭শে জুন রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ‘রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শেফালির শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হয়। শরীর কাঁপতে শুরু করে এবং তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। 

তাকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় শেফালি, তার স্বামী পরাগ, মা এবং আরও কিছু লোক বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন।’

তদন্তের অংশ হিসেবে ফরেনসিক দল বাসা থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করেছে। তারা আরও বলেছে, ‘ফরেনসিক দল বাড়ি থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ জব্দ করেছে, যার মধ্যে অ্যান্টি-এজিং ভায়াল, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট এবং গ্যাস্ট্রিকের বড়ি রয়েছে।’

চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে একাধিক ব্যক্তির জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। সূত্রটি আরও বলেছে, ‘এ পর্যন্ত পুলিশ এই মামলায় ৮ জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছে, যার মধ্যে পরিবারের সদস্য, গৃহকর্মী এবং বেলভিউ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা রয়েছেন।

তদন্তে এ পর্যন্ত কোনো বিবাদ বা ঝগড়ার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পুলিশ এবং ফরেনসিক দল এখন ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ওষুধপত্রের ল্যাব পরীক্ষার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’

মৃত্যুর কারণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ময়নাতদন্তের ফলাফল এবং জব্দ করা পদার্থের রাসায়নিক বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করবে।

এর আগে শেফালি জরিওয়ালা গত শুক্রবার রাতে মুম্বাইয়ের বাসভবনে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। পরাগ ত্যাগী তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান, যেখানে ডাক্তাররা মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের বাইরে পরাগকে অশ্রুসিক্ত অবস্থায় দেখা গেছে। পরিবার এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি।

শেফালি প্রথম ২০০২ সালের মিউজিক ভিডিও ‘কাঁটা লাগা’ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন, যা ব্যাপক হিট হয়েছিল। পরে তিনি অক্ষয় কুমার এবং সালমান খানের সঙ্গে ‘মুঝসে শাদি করোগি’ ছবিতে অভিনয় করেন। 

পরবর্তী বছরগুলোতে, তিনি টেলিভিশনে চলে আসেন, তার স্বামী পরাগ ত্যাগীর সঙ্গে নৃত্য রিয়্যালিটি শো ‘নাচ বালিয়েতে’ অংশ নেন এবং পরে ‘বিগ বস ১৩’ অংশ নেন।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement