গাজায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭২

গাজায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

Published : ১৫:২১, ২৯ জুন ২০২৫

ইসরায়েলের রাতভর গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামলায় আরও অন্তত ৭২ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (২৮ জুন) সারারাত ধরে চলা হামলায় নিহতের ওই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস শহরের কাছে মুওয়াসি এলাকায় একটি শরণার্থী শিবিরের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় ৩ শিশুসহ তাদের বাবা-মা নিহত হয়েছেন।

এছাড়া গাজা সিটির ফিলিস্তিন স্টেডিয়ামের কাছে আশ্রয় নেওয়া গৃহহীনদের মধ্যে ১২ জন নিহত হন বলে জানিয়েছেন শিফা হাসপাতালের কর্মীরা।

একইদিন দুপুরে গাজা শহরের পূর্বাঞ্চলে একটি রাস্তায় হামলায় ১১ জন নিহত হন। এছাড়া মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের প্রবেশপথে জটলায় হামলা হলে আরও ২ জন নিহত হন বলে জানিয়েছে আল-আওদা হাসপাতাল।

এদিকে দীর্ঘ ২১ মাসের যুদ্ধের পর পুনরায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতির দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সপ্তাহের মধ্যেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে বলে জানান তিনি।

গত শুক্রবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি এবং এটি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।”

এর আগে চলতি বছরের মার্চে প্রথম দফার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পুনরায় গাজায় হামলা করে নেতানিয়াহু প্রশাসন। এরপর আরেকটি যুদ্ধবির কার্যকর করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকবারই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা শুরু হয়, আবার তা স্থগিতও হয়।

এরই মধ্যে গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর যে ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল।

তাদের মধ্যে এখনও প্রায় ৫০ জন গাজায় রয়েছেন, যদিও এদের অর্ধেকেরও কম জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের পর আবারও সাপ্তাহিক বিক্ষোভে অংশ নেন ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবার ও তাদের সমর্থকরা।

তাদের অভিযোগ, জিম্মিদের মুক্ত না করে দিনের পর দিন গাজায় শুধু হামলাই চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় হামাসের হাতে জিম্মি নিমরোড কোহেনের ভাই ইয়োতাম কোহেন বলেন, “গাজায় আর কী করার বাকি আছে?”

তবে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের মতো গাজায়ও চুক্তির দিকে এগোনো সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এদিকে ইরান যুদ্ধের পর ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধ অবসানের দিকে এগোলে তার অবস্থানের আরও উন্নতির আশা করা হচ্ছে।

কিন্তু নেতানিয়াহুর জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থিরা গাজায় যুদ্ধবিরতি চান না। হামাস বারবার বলছে, গাজায় যুদ্ধ পুরোপুরি বন্ধ হলেই তারা বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে প্রস্তুত। 

নেতানিয়াহু বলছেন, হামাসকে নিরস্ত্র ও নির্বাসনে পাঠানো ছাড়া তিনি যুদ্ধ শেষ করবেন না। এই দাবি অবশ্য হামাস বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনা বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। তবে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে এবার ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে।

২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে ৫৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে এ বছরের মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে চালানো হামলায় এ পর্যন্ত ৬০৮৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।

ইসরায়েলের দাবি, তারা কেবল সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামাস সদস্যরা সাধারণ মানুষের মধ্যে অবস্থান নেয় বলে বেসামরিক হতাহতের দায় তাদেরও।

দ্বিতীয় দফায় ইসরায়েলে হামলায় গাজায় মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ২ মাসেরও বেশি সময় খাদ্য সরবরাহ বন্ধ রাখার পর গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে ইসরায়েল অল্প পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।

তবে এই ত্রাণ যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য আরেক মরণফাঁদ। খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাস আগে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন খাদ্য বিতরণ শুরু করার পর থেকে অন্তত ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, তারা শুধু সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছে এবং বেসামরিক লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনাগুলো তদন্ত করছে।

খাদ্য সংগ্রহের জন্য হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে ইসরায়েলি সেনানিয়ন্ত্রিত অঞ্চল পেরিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটতে হচ্ছে। জাতিসংঘের উদ্যোগে সামান্য খাদ্য বিতরণের প্রচেষ্টাও নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর লুটপাট ও ত্রাণবাহী ট্রাক ঘিরে জনতার ভিড়ে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

গতকালও গাজার উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের মাঝামাঝি নেটজারিম করিডোরে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি গুলিতে নিহত হন ২ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement