বাংলাদেশি নার্সদের আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা

Published : ২১:৩৪, ২২ মে ২০২৫
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ কল্পনায় এক নতুন সম্ভাবনা দানা বেঁধে উঠছে- যেখানে দক্ষতা, প্রযুক্তি ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে গড়ে উঠছে একটি প্রতিযোগিতাযোগ্য নার্সিং শিল্প। জাতিসংঘের ‘নার্সেস দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক নার্সিং সেমিনারে বিশ্বব্যাপী নার্সিং সেবার অভাব আলোচিত হলেও, বাংলাদেশের দৃষ্টিতে এটি এক নতুন যুগের সূচনা- যেখানে শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতার সমন্বয়ে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক প্রসারনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে নার্স-চিকিৎসকের অনুপাত মাত্র ৩:১, যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে এ অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩। তথাপি, দেশে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত নার্সের ঘাটতি প্রায় ৮২%। এই ঘাটতি পূরণ এবং আন্তর্জাতিক মানে রপ্তানিযোগ্য দক্ষ জনশক্তি এখনই তৈরি নার্সিং খাতকে কৌশলগত শিল্প খাতে রূপ দেবে।
বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, দক্ষ নার্সের অভাব অত্যন্ত প্রকট। ইউরোপীয় দেশগুলোতেও জনসংখ্যার বার্ধক্য ও স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণের ফলে নার্সিং জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মেধাবী শ্রমশক্তি- বিশেষ করে নারীরা- এর জন্য একটি বিপুল সুযোগ।
নার্সিং খাতকে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি পরিকল্পিত বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা এবং কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের মাধ্যমে শুরুতেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা মানোন্নয়নই নয়, বৈদেশিক রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
এই লক্ষ্যে পূরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। ঢাকায় মহাখালীতে স্থাপিত তাদের সিমুলেশন ও হাইব্রিড লার্নিং ব্যবহার করে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) প্রযুক্তি, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তবভিত্তিক শিখনকৌশল প্রশিক্ষণ গ্রহণে সহায়তা করবে। এই প্রকল্প অংশীদার ইউকের সলেন্ট নার্সিং কলেজ ও ইউনিভার্সিটি কলেজ অব নার্সিং।
এছাড়াও যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS)- যা ইউরোপ ও কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্যখাতে কর্মী প্রেরণের জন্য গঠিত- কৌশলগত অংশীদার। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে এই সংস্থা কার্যক্রম শুরু করবে।
সিটি ইউনিভার্সিটির ডিন ট্যারী এই প্রকল্পকে অভিহিত করেন “বাংলাদেশের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যকৌশল প্রশিক্ষণ খাত গড়ে তোলার স্মার্ট মডেল” হিসেবে।
অপরদিকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই উদ্যোগকে “প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যসেবার একটি বিকল্প উন্নয়ন মডেল হিসেবে গ্রহণযোগ্য” বলে মন্তব্য করেন।
বিশ্বজুড়ে দক্ষ নার্সের ব্যাপক চাহিদা, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, জাপান ও ইউরোপে, বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক মানবসম্পদ শিল্প গঠনের সুযোগ এনে দিচ্ছে। তাই পরিকল্পিত শিল্প হিসেবে নার্সিং খাত হতে পারে আমাদের পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্প-যেখানে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক রেমিট্যান্স ও একটি প্রতিযোগিতামূলক নতুন দক্ষতাকেন্দ্রিক শিল্প গড়ে উঠবে।
বিডি/ও