জমিয়ে কাঁঠাল খাওয়ার দিন আজ

Published : ১৯:৩৯, ৪ জুলাই ২০২৫
আপনি আজ কাঁঠাল খান। কারণ আজ কাঁঠালের দিন। প্রতি বছর ৪ জুলাই পালিত হয় কাঁঠাল দিবস। দিবসটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালে।
‘জ্যাকফ্রুটডে ডটকম’ নামের একটি ওয়েবসাইট কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানাতে এবং সচেতনতা বাড়াতে এই দিবসের প্রচলন করে।
কাঁঠাল শব্দটি পর্তুগিজ। ১৫৬৩ সালে পর্তুগিজ প্রকৃতিবিদ ও পণ্ডিত গার্সিয়া দ্য ওর্টা তার লেখা একটি বইয়ে ইংরেজি শব্দ ‘জ্যাকফ্রুট’ বা ‘কাঁঠাল’ ব্যবহার শুরু করেন।
যদিও ১৮৮৮ সালের দিকে হাওয়াইতে কাঁঠাল চাষের চেষ্টা করা হয়। তথ্যসূত্র বলছে, কাঁঠালের উৎপত্তি দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলেই। যেহেতু জনপ্রিয় এই ফল বাংলাদেশের জাতীয় ফল, সুতরাং দিবসটি নিশ্চয়ই আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে! তবে এটাও ঠিক, বিশ্বজুড়ে সব জায়গাতেই কাঁঠাল পাওয়া যায়।
কাঁঠাল এমন একটি ফল, যে ফলের কোষ, বিচি, খোসা সবই খাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এই ফলে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন রোগের ওষুধ।
কাঁঠালগাছের কাঠ আসবাব তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, আবার কাঁঠালপাতা গবাদিপশুর খাদ্যের যোগান দেয়। শুকনা কাঁঠালপাতা দিয়ে প্যাকেটও তৈরি করা যায়।
ফল হিসেবে কাঁঠাল কেমন? কাঁচা কাঁঠাল রান্নার সবজি হিসেবে বেশ উপাদেয়। পাকা কাঁঠালের সমাদর তো সর্বজনস্বীকৃত। তা না হলে তো আর ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’-এর মতো বাগধারার জন্ম হয় না।
কাঁচা কিংবা পাকা উভয় অবস্থাতেই কাঁঠাল খাওয়া যায়। পাকা কাঁঠালের বিচিও খেতে অনেক সুস্বাদু। কাঁঠালের রস দিয়ে তৈরি করা যায় মজার মজার ডেজার্ট।
কাঁঠালের পুষ্টিগুণ:
কাঁচা ও পাকা উভয় ধরনের কাঁঠালেই রয়েছে পুষ্টিগুণ। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কাঁঠালে আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিংক ও নায়াসিনসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান।
এছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায়, তা মানব দেহের জন্য বিশেষ উপকারী। ভিটামিন ও ফাইবারে পরিপূর্ণ কাঁঠাল খাদ্য তালিকায় রাখলে নানা পুষ্টিগুণ শরীরের টিস্যুগুলোতে শক্তি যোগায়।
এক কাপ কাঁঠালে মেলে ১৫৭ ক্যালোরি, ৩৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ গ্রাম ফ্যাট, ৩ গ্রাম ফাইবার এবং ৩ গ্রাম প্রোটিন। এছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজেরও উৎস বাংলাদেশের এই জাতীয় ফল।
যাদের কাঁঠাল খাওয়া উচিত নয়
যদিও কাঁঠাল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এই ফল খেলে প্রতিকূলতা দেখা দিতে পারে। যাদের রক্ত সংক্রান্ত কোনো রোগ আছে, তাদের কাঁঠাল খাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে কারও কারও ক্ষেত্রে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাঁঠালে থাকে পোলেন বা ল্যাটেক্স। এই দুই উপাদান কারও কারও শরীরে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
যারা ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অথবা প্রিডায়াবেটিস সেকশনে রয়েছেন, তারা বেশি কাঁঠাল খেলে ক্ষতি হওয়ার ভয় বেশি রয়েছে। কারণ কাঁঠালের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক বেশি। যে কারণে কাঁঠাল খেলে ব্লাড সুগার বৃদ্ধি পায় দ্রুত।
সার্জারির আগে ও পরে অতিরিক্ত কাঁঠাল খেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। সার্জারির পরপর সব রোগীকেই কিছু ওষুধ দেয়া হয়। কাঁঠাল খেলে সেসব ওষুধের সঙ্গে বিক্রিয়া করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কাঁঠাল খেলে খুব বেশি সমস্যা হয় না। তবে অতিরিক্ত কাঁঠাল খাওয়া ঠিক হবে না। ব্রেস্টফিড করার সময়ও এই জনপ্রিয় ফল অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
কাঁঠাল খেলে যাদের উপকার হয়
কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যদিও এটি সরাসরি কোলন ক্যানসারের চিকিৎসাকে প্রভাবিত করে না, তবে এটি ক্যানসারের অগ্রগতি রোধ করতে পারে।
পাইলসের ক্ষেত্রে কাঁঠাল উপকারী হতে পারে। কারণ, কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে হেমোরয়েড হয়। কাঁঠালে ফাইবারের পরিমাণ বেশ বেশি। এক্ষেত্রে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও এর মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়।
এ ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি। ফলে কাঁঠাল খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকায় দ্রুত এনার্জিও পাওয়া যায়।
কাঁঠালে থাকা আয়রন রক্তে লোহিতকণিকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই যারা রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন, তারা নিয়মিত কাঁঠাল খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। উপকৃত হবেন।
বিডি/ও