ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ১৯ হাজারেরও বেশি প্রবাসী

ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ১৯ হাজারেরও বেশি প্রবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

Published : ১১:৫৪, ১৯ মে ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ নির্বাচনে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদেরকেও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) লক্ষ্য, প্রবাসীরাও যেন এবার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। সেই লক্ষ্যে বেশ অগ্রগতিও অর্জন করেছে সংস্থাটি। 

ইতোমধ্যে ৭টি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ১৯ হাজারের বেশি প্রবাসীকে ভোটার হিসেবে চূড়ান্ত করেছে ইসি। তদন্তাধীন রয়েছে আরও প্রায় একই পরিমাণ নাগরিকের আবেদন। এছাড়া নতুন আরও আবেদনও আসছে প্রতিদিন।

সোমবার (১৯ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর।

 তিনি জানিয়েছেন, ৭টি দেশ থেকে আসা আবেদনগুলোর মধ্যে তদন্ত শেষে ১৯ হাজারের বেশি নাগরিকের আবেদন অনুমোদন পেয়েছে। তারা ভোটার তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। এই সংখ্যা ধীরে ধীরে আরও বাড়বে, কারণ প্রবাসে ভোটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার তৈরি করা এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে ১৯ হাজার ২৮৬টি আবেদন। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন ১১ হাজার ১২৩ জন।

জানা গেছে, সাতটি দেশ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত মোট আবেদন করেছেন ৪৫ হাজার ১৮৪ জন প্রবাসী। এদের মধ্যে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২৮ হাজার ৯২৬ জন। তদন্তে বাতিল হয়েছে ৩৫৬৩টি আবেদন। বিভিন্ন উপজেলায় তদন্তাধীন রয়েছে ২১ হাজার ৮৮৯টি আবেদন।  

দেশভিত্তিক আবেদন ও অনুমোদনের সংখ্যা:

সংযুক্ত আরব আমিরাত: ১৯ হাজার ১৯৭টি আবেদন, অনুমোদন ১০ হাজার ৬২৭টি

সৌদি আরব: ৩৫৫৪টি আবেদন, অনুমোদন ১ হাজার ৭৪টি

যুক্তরাজ্য: ৮৫২৯টি আবেদন, অনুমোদন ৩ হাজার ৯৯টি

ইতালি: ৬৩৭২টি আবেদন, অনুমোদন ১ হাজার ৮৪৪টি

কুয়েত: ৩৮৭২টি আবেদন, অনুমোদন ১ হাজার ৩৮টি

কাতার: ২৮৩২টি আবেদন, অনুমোদন ৯৪৪টি

মালয়েশিয়া: ৯৪৮টি আবেদন, অনুমোদন ২৬০টি

এছাড়াও সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় এ কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে; দেশ দুটি থেকে আসা আবেদনের তথ্য এখনও একীভূত করা হয়নি।

বিদেশে বসে ভোটার হওয়ার জন্য প্রবাসীদের জন্য চারটি তথ্য বাধ্যতামূলক:

ক। অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র (ফরম-২(ক))

খ। মেয়াদসহ বাংলাদেশি পাসপোর্ট

গ। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন

ঘ। পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি

এগুলো বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।

প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় তথ্য:

বিশেষ এলাকার নাগরিকদের জন্য “বিশেষ তথ্য ফরম”

শিক্ষা সনদ (JSC/SSC/HSC/সমমান)

পিতামাতার এনআইডি বা মৃত্যু সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়)

ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন (যদি থাকে)

দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)

নিকাহনামা এবং স্বামী-স্ত্রীর এনআইডি (যদি প্রযোজ্য হয়)

নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর/চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও কর্তৃক প্রদত্ত)

ইউটিলিটি বিলের কপি বা বাড়িভাড়ার চুক্তিপত্র ও বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র (ভাড়াটিয়া হলে)

বাধ্যতামূলক নয় এমন তথ্য জমা দিতে না পারলে প্রবাসী নাগরিকের দেশে বসবাসকারী আত্মীয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া যাবে।

নির্বাচন কমিশন ৪০টি দেশের প্রবাসীদের নিজ নিজ দেশেই ভোটার করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এরই মধ্যে ৯টি দেশে কার্যক্রম চলছে। ডিসেম্বর নাগাদ আরও ১০-১২টি দেশে এ কার্যক্রম শুরু করতে চায় কমিশন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় ২০১৯ সালে তৎকালীন কমিশন (কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে) প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে প্রবাসীদের জন্য ভোটার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি। 

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় এ কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপেও সুযোগ চালু করা হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।

২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর আবারও এ কার্যক্রম শুরু হয়। আগের আবেদনগুলো পেছনে ফেলে নতুনভাবে কাজ শুরু করে তারা। বর্তমানে সেই কার্যক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে নাসির কমিশন।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement