আগামী মাস থেকে চালু হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের জন্য মাসিক ভাতা কার্যক্রম

ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া স্বীকৃত যোদ্ধাদের সম্মানে সরকার আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাকে (বাসস) দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এই ভাতা ছাড়াও, ঐতিহাসিক ওই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা পাবেন আজীবন চিকিৎসা সেবা, যা প্রদান করা হবে সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে—এতে তাদের সুস্থতা ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতিই প্রতিফলিত হয়েছে।

“যেখানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে লেগেছে পাঁচ দশকেরও বেশি, সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানকারীদের যাচাই-বাছাই মাত্র আট মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে,” বলেন ফারুক-ই-আজম। তিনি বলেন, “এটি সম্ভব হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা ও সুশাসনের কারণে।”

আহত যোদ্ধাদের জন্য আলাদা পুনর্বাসন ইউনিট গঠন

জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা হয়েছে। ২০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত এই ইউনিটের নেতৃত্বে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব। আহতদের কর্মসংস্থান, উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা বা দক্ষতা-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসনই তাদের মূল কাজ।

উপদেষ্টা জানান, জুলাই অভ্যুত্থান ছিল দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি ভিত্তি। যারা এখনও স্বীকৃতি বা সহায়তা থেকে বঞ্চিত, তাদেরও বাদ রাখা হবে না বলে তিনি আশ্বাস দেন।

আঘাতের ধরন অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা

সরকারি স্বীকৃতি পাওয়া যোদ্ধাদের আঘাতের মাত্রা অনুযায়ী তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে:

ক্যাটাগরি ‘এ’ – গুরুতর আহত

• মোট: ৪৯৩ জন

• মাসিক ভাতা: ২০,০০০ টাকা

• এককালীন অনুদান: ৫ লাখ টাকা (২ লাখ দেওয়া হয়েছে, বাকি ৩ লাখ জুলাইয়ে দেওয়া হবে)

• মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ

• কেউ কেউ ইতিমধ্যে তুরস্ক ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন

ক্যাটাগরি ‘বি’ – মাঝারি আঘাত

• মোট: ৯০৮ জন

• মাসিক ভাতা: ১৫,০০০ টাকা

• এককালীন অনুদান: ৩ লাখ টাকা (১ লাখ দেওয়া হয়েছে, বাকি দুই লাখ জুলাইয়ে)

• পেশাগত প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন সহায়তা থাকবে

ক্যাটাগরি ‘সি’ – সামান্য আঘাত বা সুস্থ

• মোট: ১০,৬৪২ জন

• মাসিক ভাতা: ১০,০০০ টাকা, জুলাই থেকে কার্যকর

• এককালীন অনুদান: ১ লাখ টাকা

• পুনঃসম্পৃক্তি ও পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া হবে

শহীদ পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ ক্ষতিপূরণ

সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ৮৩৪ জন শহীদ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ দেওয়া হবে দুই ধাপে:

• ১০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়া হয়েছে

• বাকি ২০ লাখ টাকা ২০২৫–২৬ অর্থবছরে দেওয়া হবে

এছাড়াও পরিবারগুলো মাসিক ২০,০০০ টাকা ভাতা পাবে এবং পরিবারের যোগ্য সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

প্রতীকী স্বীকৃতি: ৫ আগস্ট হবে ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’

জুলাই আন্দোলনের স্মরণে প্রতিবছর ৫ আগস্ট দিনটি ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা আন্দোলনের ইতিহাসকে জাতীয় স্বীকৃতি দেবে।

ফারুক-ই-আজম আরও জানান, ১৩৪টি শহীদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ বিতরণে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছু বিলম্ব হয়েছে। তবে সমস্যাগুলো সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে। একইসঙ্গে আহতদের তালিকায় যেসব ভুল রয়েছে, সেগুলো সংশোধনের কাজও এগিয়ে চলছে।

তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে কেউ হারানো স্বজনের তথ্য নিয়ে এগিয়ে এলে—even decades later—we will take it seriously.” প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা ও ফরেনসিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গণকবর থেকে মৃতদের শনাক্ত করা হবে।