দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পেলো জামায়াত

Published : ২১:৫৮, ২৪ জুন ২০২৫
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পার হয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অবশেষে আবারও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। একই সঙ্গে দলটি ফিরে পেয়েছে তাদের পুরনো নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
আইনি প্রেক্ষাপট: এক নজরে নিবন্ধনের উত্থান-পতন
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর, এক-এগারোর সময় নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন প্রদান করে। তবে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট দায়ের করেন বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী ও আরও কয়েকজন।
এই রিটের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করে। জামায়াতে ইসলামী এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে, যার শুনানি প্রক্রিয়া বছরের পর বছর স্থগিত থাকে।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর, জামায়াতের পক্ষ থেকে আপিল শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মামলা পুনরুজ্জীবিত
২০২৪ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর, জামায়াতে ইসলামী আপিল বিভাগে নতুন আবেদন করে যাতে মামলা পুনরুজ্জীবিত করার অনুরোধ জানানো হয়। একইসঙ্গে দেরি মার্জনার আবেদনও করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর, দীর্ঘ শুনানি শেষে আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে। এরপর একাধিক দফা শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহালের নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশনকে।
প্রজ্ঞাপন কী বলছে
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৯৭২ সালের Representation of the People Order অনুযায়ী নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ পূরণ করে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ২০০৮ সালে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয় হাইকোর্টের রায় অনুসারে।
তবে Civil Appeal No. 139 of 2013 এবং Leave to Appeal No. 3112 of 2013-এ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দলটির নিবন্ধন পুনরায় কার্যকর করার আদেশ দেয়। সেই রায়ের আলোকে ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকসহ রাজনৈতিক স্বীকৃতি পুনর্বহাল করা হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ একটি দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক শক্তি আবারও সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ পেল।
তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা মহলে আলোচনা, সমালোচনা এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে গণতান্ত্রিক পরিসরে অংশগ্রহণের সুযোগ বললেও, অন্যরা এটিকে নবউত্থানের ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন।
বিডি/শ