বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮৩ লাখ

Published : ১৩:৩৫, ২৬ জুন ২০২৫
বাংলাদেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ লাখে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) পরিচালিত এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এ তথ্য। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ডিএনসি এমন কোনো পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা চালাল। এর আগে, ২০১৮ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণায় মাদকাসক্তের সংখ্যা ধরা হয়েছিল ৩৬ লাখ। নতুন তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, যা দেশের মাদক পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতিকে নির্দেশ করে।পুরুষই বেশি, তবে নারী ও শিশুও ঝুঁকিতে সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাদকাসক্তদের বড় অংশই পুরুষ হলেও, নারী ও শিশুদের মধ্যেও মাদক সেবনের প্রবণতা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সমাজের ভঙ্গুর সামাজিক কাঠামো এবং সহজলভ্য মাদকের পরোক্ষ প্রতিফলন। কোন মাদকে কতজন আসক্ত? সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী— গাঁজা: প্রায় ৬১ লাখ মানুষ গাঁজায় আসক্ত, যা মোট মাদকাসক্তের ৫২ শতাংশ। ইয়াবা: ২৩ লাখ মানুষের প্রিয় মাদক ইয়াবা (২০ শতাংশ)।মদ: মদ্যপানে আসক্ত ২০ লাখ ২৪ হাজার জন (১৭ শতাংশ)। ফেনসিডিল ও সমজাতীয় মাদক: প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার জন।হেরোইন: প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ নিয়মিত হেরোইন সেবন করে থাকেন।বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি ,মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বিষয়টিকে “ভয়ংকর সামাজিক সংকেত” হিসেবে দেখছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, “৮৩ লাখ মানুষ যদি মাদকাসক্ত হয়, তাহলে এটা প্রমাণ করে মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।” তার মতে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণেই এমন পরিণতি হয়েছে।
নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা—যাতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের সব অংশীদার একযোগে কাজ করে। একই সঙ্গে মাদক rehabilitate (পুনর্বাসন) কার্যক্রমকে বিস্তৃত করতে হবে। এই সমীক্ষা মাদকবিরোধী উদ্যোগের জন্য একটি নতুন বাস্তবতা সামনে এনেছে। এখন সময়, দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার। নতুবা আগামী প্রজন্ম আরও ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে পারে।