উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সফলতা লাভ

উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সফলতা লাভ

TheBusinessDaily

Published : ১৪:২৯, ২৬ জুন ২০২৫

উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছেন কৃষক সবুর আলী মোড়ল। পাইকগাছায় উপজেলার গোপালপুর গ্রামে তার ক্ষেতে স্ট্রবেরি চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন। অত্যন্ত লাভজনক ফসল হওয়ায় এলাকায় অনেকে তার দেখাদেখি স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তারা সবুর মোড়লের কাছ থেকে চারা সংগ্রহ ও চাষাবাদ পদ্ধতি জেনে বাড়ির ছাদে টবে ও ক্ষেতে চাষাবাদ শুরু করেছে।

অত্যন্ত রসালো ও সুস্বাদু ফল স্ট্রবেরি। স্ট্রবেরি গাছ দেখতে অনেকটা আলু গাছের মতো।

তবে পাতা বড় ও চওড়া। স্ট্রবেরি গাছ থেকে রানার বা লতি বের হয়ে চারিদিকে চারা হতে থাকে। একটি স্ট্রবেরি গাছ থেকে চারার বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে বছরে কয়েকশ' চারা উৎপাদন করা সম্ভব। স্ট্রবেরি ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ ও পাকলে টকটকে লাল রঙের হয়। ফল দেখতে অনেকটা লিচুর মতো। ফলের ওজন ৫ গ্রাম থেকে ২৫ গ্রামের উপরে হয়। স্ট্রবেরি শীতপ্রধান দেশের ফল। শীতকালে স্ট্রবেরি গাছ থেকে প্রচুর ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ থেকে শীতের ৩ থেকে ৪ মাসে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ফল পাওয়া সম্ভব। তবে বাংলাদেশে গরমের সময় এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এ গাছ বাঁচিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য।

খুবই

জানা গেছে, স্ট্রবেরিতে ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড, ফ্যারালিক এসিড, পলি ফেনাক, অ্যালাজিক এসিডসহ জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ।

এদের মধ্যে অ্যালিজক এসিডে বার্ধক্য, যৌনরোগ, ক্যানসার প্রতিরোধের গুণাগুণ আছে। ১৯৮৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মুনজুর হোসেন জাপান থেকে একটি স্বল্প দিবা দৈর্ঘ্য জাতের স্ট্রবেরি এনে বাংলাদেশে চাষাবাদ শুরু করেন। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত টিসু কালচার ল্যাবে কয়েক বছর ধরে গবেষণা

করে জাতটি উদ্ভাবনে সক্ষম হন।

পাইকগাছার স্ট্রবেরি চাষি সবুর মোড়ল সরকারি কৃষি শিক্ষা সফরের মধ্য দিয়ে স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ হন। তিনি একটি মাত্র চারা সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করেন। ২০০১ সালের টিসু কালচার পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারাগাছ লাগিয়ে পাইকগাছার প্রতিকূল আবহাওয়ায় বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হন। ২০১০ সালে স্ট্রবেরি গাছ নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম

করে ক্ষেত গড়ে তুলতে সক্ষম হন। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্ষেতের উৎপাদিত ফল ১৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন। লবণাক্ত উপকূল এলাকার প্রতিকূল আবহাওয়ায় সবুর মোড়লের স্ট্রবেরি চাষের কথা ছড়িয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ গবেষক ড. মমতাজ উদ্দীন তার ক্ষেতটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বিভাসচন্দ্র সাহা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিকূল আবহাওয়ায় স্ট্রবেরি চাষে কৃষক সবুর মোড়ল সফল হওয়ায় ড. মমতাজ উদ্দীন সবুর মোড়লকে উৎসাহিত করে বলেন, সবুর শুধু কৃষকই নয় একজন কৃষি গবেষকও বটে। সবুর মোড়ল ২০১২ সালে তার নিজ ক্ষেতে উৎপাদিত ৮০০ চারা লাগিয়ে ১৫৩ কেজি ফল বিক্রি ও চারা বিক্রি করে ১ লাখ ২

হাজার টাকা আয় করেছেন।

তিনি ৩ কাঠা জমিতে বেড তৈরি করে স্ট্রবেরি ক্ষেত ও ১ কাঠা জমিতে টবে চারা লাগিয়ে স্ট্রবেরি ক্ষেত গড়ে তুলেছেন। দেখা গেছে, উভয় ক্ষেতের ফলন একই রকম। টবে লাগানো গাছটি ইচ্ছামতো তুলে কোনো স্থানে রেখে পরিচর্যার মাধ্যমে ফল পাওয়া সম্ভব। তিনি স্থানীয়ভাবে স্ট্রবেরি ফল বিক্রির বাজার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি কেজি ফল ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবুর মোড়ল নিজের স্ট্রবেরি ক্ষেতে পরিচর্যার পাশাপাশি তার পরামর্শ নিয়ে পাশের গ্রামের যারা স্ট্রবেরি চাষাবাদ শুরু করছে তাদের ক্ষেতও তদারকি করছেন।

এ ধরনের স্ট্রবেরি চাষিরা হলেন_ হোগলার চক গ্রামের সুধীর সরকার, আমুরকাটা গ্রামের বিকাশ সরকার, সনাতনকাটি গ্রামের শওকত হোসেন, গোপালপুর গ্রামের বিশে গাজী, নূর ইসলাম ও নিরাপদ কবিরাজ। তারা ক্ষেত ও টবে স্ট্রবেরি লাগিয়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সফল কৃষক হিসেবে সবুর মোড়লকে বিভিন্ন সংগঠন গুণীজন

সংবর্ধনা প্রদান করেছেন।

এ ব্যাপারে সফল স্ট্রবেরি চাষি সবুর মোড়ল জানান, লবণাক্ত এলাকায় স্ট্রবেরি চাষকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সফল হন। তিনি এ অঞ্চলের নার্সারি মালিকদের স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। তিনি এ অঞ্চলের শৌখিন ব্যক্তি ও কৃষকদের স্ট্রবেরি চাষে উদ্বুদ্ধ করে স্ট্রবেরি পল্লী গড়ে তোলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। স্ট্রবেরি চাষ অত্যন্ত

লাভজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষক ও বেকার যুবকরা সম্ভাবনাময় এ ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ

হয়েছেন।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement