দেশজুড়ে ভোটের হাওয়া, তবুও অস্বস্তি কাটছে না

Published : ১৮:০১, ৭ আগস্ট ২০২৫
নির্বাচন ঘোষণাকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "আমরা আশা করি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেবে। " তবে বিএনপির ভেতরেও কিছু অস্বস্তি রয়েছে—বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যাদের নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলে ধারণা। নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তির বদলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। দল দুটির বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে যে, ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন এবং কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া নির্বাচন আয়োজন যথেষ্ট নয়।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, "নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ এখনো নিশ্চিত হয়নি। সরকারকে জুলাই সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন করতে হবে এবং তা আইনি বৈধতা দিতে হবে।" এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, "আমরা গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবি জানিয়ে আসছি। জুলাই সনদ অন্তর্বর্তী সরকারের সময় থেকেই কার্যকর করতে হবে এবং সেই ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে।" অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরেও মতপার্থক্য ও দ্বিধা রয়েছে। একটি পক্ষ মনে করে, ২০২৪ সালের সহিংসতায় দায়ীদের বিচার এবং কাঠামোগত সংস্কার ছাড়াই নির্বাচন আয়োজন সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, আরেকটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমনে দ্রুত নির্বাচিত সরকার গঠন অপরিহার্য। এই পরামর্শের ভিত্তিতেই প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন ছাড়া বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের বাস্তবসম্মত কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, "সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান করে নির্বাচন হলে ভালো হতো। কিন্তু সময় অনেকটাই পেরিয়ে গেছে। এখন নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই।" বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরে ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের দিক থেকেও নানামুখী চাপ ও অস্থিরতার ইঙ্গিত রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনের রূপরেখা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অস্বস্তি কমবে না। জামায়াত ও এনসিপির নির্বাচন অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। তবে জামায়াত ইতোমধ্যে আসনভিত্তিক প্রাথমিক মনোনয়ন ও জনসংযোগ শুরু করেছে। এনসিপির বেশ কয়েকজন নেতা নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। তবুও দলীয়ভাবে তারা এখনো নির্বাচন নিয়ে সরাসরি সিদ্ধান্ত জানায়নি।
রাজনৈতিক মহলে এই নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলেও স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। সংবিধান সংস্কার, বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন আয়োজন নতুন করে অনাস্থা ও অস্থিরতার জন্ম দিতে পারে—এমন আশঙ্কা রয়েছে বিশ্লেষক ও অংশগ্রহণকারী দলের মধ্যে। নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ এখন কেবল একটি ঘোষণায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা পরিণত হয়েছে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মঞ্চে।