জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ৬ মরদেহ এক বছর পর দাফন: শনাক্ত হয়নি কেউ

Published : ১৭:০৬, ৭ আগস্ট ২০২৫
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, “আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, মরদেহগুলো আজ সকালে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সংস্থাটি জুরাইন কবরস্থানে মরদেহগুলো দাফন করেছে।” তিনি আরও বলেন, “এক বছরের বেশি সময় ধরে মরদেহগুলো মর্গে ছিল। এই সময়ের মধ্যে অনেকেই মরদেহ শনাক্ত করতে এসেছেন, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষাও করা হয়েছে, তবে কারও সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যায়নি।” শাহবাগ থানার তথ্য অনুযায়ী, ছয়টি মরদেহ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় গত বছরের ৫ আগস্টের আগে।
মরদেহগুলোর ময়নাতদন্তে আঘাতজনিত মৃত্যুর বিষয়টি উঠে আসে। তবে কে বা কারা এই হত্যা করেছে, কীভাবে, কেন – এসব বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কোনো তথ্য উদ্ঘাটন হয়নি। সংস্থাটির দাফন সেবা কর্মকর্তা কামরুল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, “আজ সকালেই ঢাকা মেডিকেল থেকে আমরা ছয়টি মরদেহ বুঝে পেয়েছি।
এরপর দুপুর ২টার দিকে জুরাইন কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।” আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম প্রায়ই অজ্ঞাত ও অবহেলিত মরদেহ দাফনের দায়িত্ব পালন করে থাকে। তবে এই ছয়টি মরদেহ বিশেষ গুরুত্বের কারণেই বছরজুড়ে রাখা হয়েছিল—এই ঘটনায় নিহতদের পরিচয় শনাক্তের আশায়। গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান ও সহিংসতা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বড় ধরনের উত্তাপ ছড়ায়। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এবং গণপিটুনিতে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখনকার অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক সংঘাতের আবহেই এই ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। তবে দীর্ঘ তদন্ত, ডিএনএ বিশ্লেষণ এবং গণপ্রতিক্রিয়ার পরও কেউ তাদের স্বজন হিসেবে এগিয়ে আসেননি বা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, “বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন, কিন্তু কারও সঙ্গে মরদেহের নমুনার মিল পাওয়া যায়নি।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্র ও সমাজের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা মৃতদের দাফনের বিষয়টি নিছক একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি একটি গভীর মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। নাগরিকদের মৃত্যুর পরও যদি তাদের পরিচয় অজানা থেকে যায়, তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতার প্রশ্নও সামনে আসে।
এক বছর আগে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় প্রাণ হারানো ছয়জন মানুষের মরদেহ অবশেষে তাদের নাম-পরিচয় ছাড়াই চিরনিদ্রায় শায়িত হলো। এই ঘটনায় প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—তারা কারা ছিলেন? কী তাদের অপরাধ ছিল, যদি থেকে থাকে? রাষ্ট্র কি সত্যিই তাদের সুরক্ষা দিতে পেরেছিল? এই অজানা পরিচয়ের মৃত্যু যেন নতুন করে চিন্তার খোরাক জোগায়—অপরিচিত হলেও তারা ছিলেন কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও স্বপ্ন।
S