পল্লবীতে জামায়াতের সম্মেলন ও মিছিল: মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড তীব্র সমালোচনা

Published : ২৩:০১, ১৪ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোষ্ঠী তাদের দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করেছে। তিনি মনে করেন, গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে জনগণ এই গোষ্ঠীকে অনেক আগেই হলুদ কার্ড দেখিয়েছে এবং মিটফোর্ডের ঘটনায় তাদের লাল কার্ড দেখানোর কাজ সম্পন্ন করেছে।
সোমবার (১৪ জুলাই ২০২৫) বিকাল ৫টা ৩০ মিনিটে পল্লবীর ২ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার অডিটোরিয়ামে ইউনিট দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য ও পল্লবী জোন পরিচালক অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মোস্তফা ফয়সাল পারভেজ। বক্তব্য রাখেন রূপনগর থানার আমীর আবু হানিফ, পল্লবী দক্ষিণ থানার আমীর আশরাফুল আলম, পল্লবী মধ্য থানার আমীর রইসুল ইসলাম পবন এবং পল্লবী উত্তর থানার আমীর মাওলানা সাইফুল কাদের। সমাবেশ শেষে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে পল্লবী থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত একটি বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, তথাকথিত প্রথাগত রাজনীতি দেশ ও জাতির জন্য কিছুই দিতে পারেনি। বরং এই রাজনীতি জনগণকে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও লুটপাট উপহার দিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এই রাজনীতির ধারক-বাহকরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই ব্যস্ত থেকেছেন। তবে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে একটি ইতিবাচক ও মৌলিক পরিবর্তন এসেছে, যার ফলে অপরাজনীতির প্রবক্তারা এখন অসহায় ও এতিম হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে প্রলাপ বকছেন। তিনি তাদের স্লোগান ‘দিল্লি গেছে স্বৈরাচার, পিণ্ডি যাবে রাজাকার’ উল্লেখ করে বলেন, এই স্লোগান বাস্তবায়িত হলে তাদেরই একদলকে দিল্লি ও অপর দলকে পিণ্ডি যেতে হবে, কারণ রাজাকারের তালিকায় তাদের নাম অন্যদের তুলনায় বেশি। তিনি সংশ্লিষ্টদের নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে ইতিবাচক রাজনীতি শুরু করার আহ্বান জানান, অন্যথায় জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে।
তিনি আরও বলেন, আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের হাতে একটি সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল। তারা চাইলে দলীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি এবং ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার জন্য প্রস্তুত করতে পারত। কিন্তু তারা দেশকে চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে। তাদের বর্তমান স্লোগান ‘চাঁদা দিলে পুরস্কার, না দিলে বহিষ্কার’। মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা তাদের দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, চাঁদাবাজি, দখলদারি ও অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের দলে ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তিনি তাদের সকল প্রকার অপরাধ প্রবণতা বন্ধ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করার আহ্বান জানান, অন্যথায় তারা রাজনীতির ময়দান থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। আওয়ামী-বাকশালী পুলিশের মতো আচরণ করবেন না। মিটফোর্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টরা নিজেদের দলীয় কর্মী হিসেবে স্বীকার করে বহিষ্কার করলেও পুলিশ তাদের দলীয় পরিচয় খুঁজে পাচ্ছে না। এ ধরনের দালাল পুলিশদের নির্বাচনকালীন কোনো দায়িত্বে রাখা যাবে না। নির্বাচন কমিশনকে তাদের প্রত্যাহার করতে হবে। তিনি গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সুশাসন ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৯ জুলাইয়ের জাতীয় সমাবেশ সফল করতে সবাইকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। এই সমাবেশ ও মিছিল জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক অবস্থান এবং মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাদের সক্রিয়তার প্রতিফলন। এটি জনগণের মধ্যে তাদের বার্তা পৌঁছানোর এবং আসন্ন জাতীয় সমাবেশের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
BD/S