চ্যাটজিপিটি কি ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে মানুষের চিন্তাশক্তি? এমআইটি গবেষণায় মিলল অশনি সঙ্কেত

Published : ১৮:৫১, ১০ জুলাই ২০২৫
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রযুক্তির দুনিয়ায় যুক্ত হয় চ্যাটজিপিটি— এক নতুন ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চ্যাটবট, যা অল্প সময়েই মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাইক্রোসফটের অংশীদারিত্বে তৈরি এই এআই প্রযুক্তি সহজ করে দিয়েছে জটিল কাজ, উত্তর দিয়েছে কঠিন প্রশ্নের, এমনকি লিখে দিয়েছে কবিতা, রান্নার রেসিপি থেকে শুরু করে অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা প্রেমের পরামর্শও।
তবে এই সুবিধাই এখন ভাবাচ্ছে গবেষকদের। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)-এর বিজ্ঞানীরা তাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলছেন, চ্যাটজিপিটি’র অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের চিন্তাশক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।চার মাসব্যাপী গবেষণায় অংশ নেন ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি। তাদের তিনটি দলে ভাগ করে দেওয়া হয়: ১. শুধুমাত্র মস্তিষ্ক ব্যবহার করে লেখার দল (ব্রেন অনলি) ২. সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীরা ৩. চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীরাতিন ধাপে এদের প্রবন্ধ লেখার কাজ দেওয়া হয়। এ সময় গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে তড়িৎ সংকেত পর্যবেক্ষণ করেন এবং লেখা বিশ্লেষণ করে মূল্যায়ন করেন মনোযোগ ও সক্রিয়তার মাত্রা।ফলাফলে দেখা যায়, যারা চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেছেন, তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। তারা নিজেদের লেখায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতিও মনে রাখতে পারেননি এবং লেখার প্রতি তাদের সম্পৃক্ততাও কম ছিল।
গবেষণার চতুর্থ ধাপে প্রতিটি দলের ভূমিকা পরিবর্তন করা হয়। যারা আগে এআই ব্যবহার করেছেন, তারা এবার নিজেদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে লিখেছেন এবং যারা আগে নিজে লিখেছেন, তারা এবার এআই ব্যবহার করেছেন।ফলাফলে দেখা যায়, যারা চ্যাটজিপিটি থেকে মস্তিষ্ক-নির্ভর লেখায় ফিরেছেন, তাদের পারফরম্যান্স ছিল তুলনামূলক দুর্বল। এতে ধারণা করা হচ্ছে, দীর্ঘদিন এআই ব্যবহারের ফলে তারা তাদের মনোযোগ ও চিন্তার গভীরতা হারাচ্ছেন।
গবেষকরা স্বীকার করছেন, এই চতুর্থ ধাপে মাত্র ১৮ জন অংশগ্রহণ করেছেন। তাই এই ফলাফলকে চূড়ান্ত না ধরে প্রাথমিক পর্যায়ের প্রমাণ হিসেবে দেখা উচিত। আরও বৃহৎ পরিসরে গবেষণা ছাড়া এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত হবে না যে, এআই ব্যবহারে মানুষের বুদ্ধি বা শেখার ক্ষমতা স্থায়ীভাবে হ্রাস পাচ্ছে।ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তির এই প্রভাব নতুন নয়। ১৯৭০-এর দশকে যখন ক্যালকুলেটরের ব্যবহার শুরু হয়, তখনও সমালোচনা উঠেছিল যে এটি মানুষের গণনাশক্তি কমিয়ে দেবে। কিন্তু সে সময় শিক্ষাব্যবস্থায় মান বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
তাই এখনকার চ্যালেঞ্জ— কিভাবে এআইকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ না করে, বরং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের চিন্তা, বিশ্লেষণ ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানো যায়। চ্যাটজিপিটি কিংবা যেকোনো এআই টুল ব্যবহারে সুবিধা থাকলেও, এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মানুষের চিন্তাশক্তি ও শেখার ক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে সহায়ক শক্তি হিসেবে— বিকল্প নয়। নইলে ভবিষ্যতে মানুষের নিজের মস্তিষ্কই হতে পারে সবচেয়ে দুর্বল অস্ত্র।
BD/S