গোপন বৈঠকে ইসরাইল-সিরিয়া, মধ্যস্থতায় আরব আমিরাত

Published : ২১:০১, ১৬ মে ২০২৫
সম্প্রতি ইসরায়েল ও সিরিয়ার নতুন শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে গোপন আলোচনা চলছে- এমন খবর উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। আলোচনার অন্যতম বিষয় হচ্ছে, সিরিয়ার নতুন সরকারকে আব্রাহাম চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা।
শুক্রবার (১৬ মে) ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলি তাদের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় এ গোপন বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে হারেতজ পত্রিকার দাবি, কাতার এ আলোচনা প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে এবং তা কয়েক মাস ধরে চলছে।
একটি বৈঠক সম্প্রতি আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে চ্যানেল ১২ জানিয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আইডিএফ-এর অপারেশনস ডিরেক্টরেটের প্রধান মেজর জেনারেল ওডেড বাসিউক। সিরিয়ার নতুন সরকারের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি সেখানে তুরস্কের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার মাত্র একদিন আগে রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার মধ্যে ২৫ বছরের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ট্রাম্প শারাকে আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে আহ্বান জানান।
পরবর্তীতে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি শারাকে বলেছি, আশা করি তুমি আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে যখন তোমার অভ্যন্তরীণ অবস্থা স্থিতিশীল হবে। সে ‘হ্যাঁ’ বলেছে, কিন্তু এখনো অনেক কাজ বাকি।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল আগে শারার নেতৃত্বকে সন্দেহের চোখে দেখত, কারণ তিনি একসময় সিরিয়ার আল-কায়েদা শাখার শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন এবং তাকে সন্ত্রাসী হিসেবেও বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে।
চ্যানেল ১২ বলছে, ইসরায়েল এখন সিরিয়াকে ইরানের প্রভাব বলয়ের বাইরে নিয়ে আসা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ছাতার নিচে আনার সুযোগ দেখছে। এমনকি এই অগ্রগতি ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোও সিরিয়াকে ইরানের ছায়া থেকে সরিয়ে আনতে চাচ্ছে বলে লন্ডন টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। ইরান দীর্ঘদিন ধরে বাশার আল-আসাদের সরকারকে সমর্থন দিয়ে এসেছে এবং সিরিয়ায় নিজের প্রভাব বিস্তার করেছে।
এদিকে তুরস্কও সিরিয়ায় তার উপস্থিতি বাড়িয়েছে এবং শারার নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়ে আসছে।
ইসরায়েল এখনো সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং গোলান মালভূমি সংলগ্ন এলাকায় সেনাঘাঁটি রয়েছে। পাশাপাশি, সিরিয়ায় সাবেক শাসনকাঠামো সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।
মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তনশীল ভূরাজনীতিতে সিরিয়ার অবস্থান এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। আব্রাহাম চুক্তিতে সিরিয়ার সম্ভাব্য যোগদান কেবল ইসরায়েল-সিরিয়া সম্পর্ক নয়, বরং পুরো অঞ্চলের কৌশলগত ভারসাম্যকেই প্রভাবিত করতে পারে।
যদিও চূড়ান্ত কিছু ঘটেনি, তবে চলমান এই গোপন আলোচনা ভবিষ্যতের বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।
বিডি/ও