রাবিপ্রবিতে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভাল শুরু

রাবিপ্রবিতে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভাল শুরু

রাবিপ্রবি প্রতিনিধি: 

Published : ২১:৫৯, ১৬ মে ২০২৫

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) ও বাংলাদেশ বায়োসেইফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি (বিবিবিএস) এর যৌথ উদ্যোগে রাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এন্ড বায়োসায়েন্স কার্নিভাল (আইসিবিসি)। 

শুক্রবার (১৬ মে) দুপুর আড়াইটায় রাঙ্গামাটির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আতিয়ার রহমান।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমবারের মত বায়োসায়েন্স কনফারেন্স ও কার্নিভাল আয়োজন করতে পেরে শুধুমাত্র রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-ই গর্বিত নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের সবাই গর্বিত। এধরনের কনফারেন্স বিশ্ববিদ্যালয়কে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের অপূরণীয় চাহিদা এবং বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমরা পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস গড়তে ও সময় ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছি। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বে সংকীর্ণতা না থাকুক এবং এ এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে এই বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা রাখুক। বক্তব্যের শেষে তিনি কনফারেন্সের সকল মিডিয়া পার্টনার, পৃষ্ঠপোষক, গবেষক এবং অংশীজনদেরকে কনফারেন্স সফল করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।  

এরপর প্লেনারী সেশনের প্রথম বক্তা হিসেবে ‘Innovations and Collaborations in Bioscience, Biosafety and Biosecurity for Sustainable Healthcare’ বিষয়ে আইসিডিডিআরবি বায়োসেফটি এর প্রধান ও বাংলাদেশ বায়োসেফটি এন্ড বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি এর সভাপতি ড. আসাদুল গণি বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, টেকসই স্বাস্থ্যসেবা একটি বহুবিষয়ক পদ্ধতি (মাল্টিডিসিপ্লিনারি এপ্রোচ) শুধুমাত্র মেডিকেল সায়েন্স, মাইক্রোবায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথমেটিক্স, স্ট্যাটিসটিকস-সহ এধরনের সব ডিসিপ্লিন একসাথে জড়ো করে মানুষ এবং প্রাণীকূলের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা (ওয়ান হেলথ) নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে হয়। ২০২৫ সালে উন্নত বিশ্বে বায়োটেকনোলজি মাধ্যমে ল্যাব অটোমেশন চালু করছে- যেখানে বায়োসেফটি লেভেল ফোর নিশ্চিত করতে ল্যাব রোবট দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছে। 

‘Natural Products in Drug Discovery: Challenges and Potential’ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরা আহসান বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঔষধ আবিষ্কারে সঠিক উৎস নির্বাচনে নির্ভুলতা ও কার্যকারিতা নির্ধারণে কাজ করে। এআই অল্প সময়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান এবং ডাটাবেইজকে একত্রিত করে নতুন ঔষধ তৈরীতে সহায়তা করে। 

এরপর গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক  ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মেধার অভাব নেই। পর্যাপ্ত গবেষণাগার এবং গবেষণা উপকরণের অভাব রয়েছে তাই বিজ্ঞানের চর্চায় যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো দূর করে অব্যাহত রাখতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়ার একটা সর্ম্পক গড়ে তুলতে হবে। ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবন এবং আমাদের উদ্ভাবন করার জন্য আছে নতুন প্রজন্ম। এদের একটা সেতু বন্ধন যদি আমরা গড়তে পারি তাহলে আমরা এগিয়ে যাবো। 

‘Food Security, Forestry, Bio-Blue Economy and Climate Mitigation:  A Possible New Platform for Development in The Chattogram Hill Tracts’ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বাংলাদেশের বিশিষ্ট জীন বিজ্ঞানী ও বহুব্রীহি ধানের আবিষ্কারক ড. আবেদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের খাদ্য সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় এ অঞ্চলে সারাবছর খাদ্যশস্য উৎপাদন এবং একই ধান গাছ থেকে পাঁচবার ফসল আহরণ নিশ্চিত করতে পঞ্চব্রীহি ধান চাষের সম্ভবনার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে আগর গাছ রোপণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব। এমুহূর্তে এ অঞ্চলটি মিথেন নির্গমনের হার প্রায় শূন্য- যা এ অঞ্চলের গর্বের বিষয়।  

গেস্ট অব অনার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ সাইদুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বক্তব্য প্রদান করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে যাতে এটি এখানকার জাতি নির্বিশেষে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ও উন্নত জীবিকা নিশ্চিত করবে। কাপ্তাই হ্রদ জীবিকার বিকল্প পথ সৃষ্টি করেছে। মৎস্য চাষের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্গম এলাকা থেকে ফলজ এবং বনজ পণ্য পরিবহনে সুযোগ তৈরী করেছে। মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বায়োসেইফটি ও বায়োসিকিউরিটি সোসাইটি এর সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রাকিবুল ইসলাম এবং ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী অধ্যাপক ও আইসিবিসি’র সেক্রেটারি ড. নিখিল চাকমা ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে টেকনিক্যাল সেশনে চেয়ার ও কো-চেয়ার হিসেবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল মজিদ এবং মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। এ-সেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ ‘Current Challenges in the Control and Eradication of Emerging and Reemerging Infectious Diseases in Humans’ বিষয়ে ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তারা হলেন আইসিডিডিআরবি এর গবেষক বেগম এম এন, ড. আলীম এম এ, সাজেদুর রহমান  এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কেয়া ইউ এ, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এম এইচ খাতুন ও রাবিপ্রবি-র গবেষক মোঃ সাকিব উদ্দিন।
 
এই আয়োজন চলবে ১৮ মে পর্যন্ত, যেখানে থাকছে বিতর্ক, পোস্টার প্রদর্শনী এবং বৈজ্ঞানিক আলোচনা। এ আয়োজন পাহাড়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং নতুন প্রজন্মের গবেষকদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement