নেক ব্লাস্টে ধ্বংস হচ্ছে বোরো ধান, দিশেহারা কৃষক

নেক ব্লাস্টে ধ্বংস হচ্ছে বোরো ধান, দিশেহারা কৃষক

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

Published : ১৯:১৫, ১৬ মে ২০২৫

নেক ব্লাস্ট রোগকে স্থানীয়ভাবে বলা হয় কারেন্ট পোকা। এ রোগের আক্রমণে গাইবান্ধার বোরো ধানের ক্ষেত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কৃষকের চোখের সামনে ঘাম ঝরানো কষ্টের ধান চিটা হয়ে গাছ মরে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না ফসল। দুঃসময়ে কৃষি বিভাগকে পাশে না পেয়ে নিয়ে হতাশ কৃষকেরা। 

তবে কৃষি বিভাগের দাবি, মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পাশে রয়েছে তাদের কর্মকর্তারা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধার ৭টি উপজেলায় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরো ধানের শীষ। একই সঙ্গে দুলছে কৃষকের স্বপ্নও।

কিন্তু সেই স্বপ্নে আঘাত হানছে নেক ব্লাস্ট। ধান পাকার সময়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের শীষ চিটা হয়ে যাচ্ছে। পাতা সাদা হয়ে যাচ্ছে, গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত বোরো ধানের ক্ষেতের সংখ্যা।

চড়া দামে বীজ, সার ও কীটনাশক ক্রয় করে ধান চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। 

বাজার থেকে একাধিক কোম্পানির কীটনাশক ক্রয় প্রয়োগ করেও কোনো সুফল মিলছে না। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে ধানগাছ কেটে নিচ্ছেন গো-খাদ্য হিসেবে, কিন্তু আক্রান্ত ধান গাছের খড় গবাদিপশুও খাচ্ছে না।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ প্রামের প্রান্তিক কৃষক রেজা মিয়া বলেন, ধার-দেনা করে নিজের ও বর্গা নেওয়া ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। আবাদও ভালো হয়েছে। থোকা থোকা ধানের শীষে ভরে উঠেছে ক্ষেত। পাকতে শুরু করেছে তার ক্ষেতের ধান। কিন্তু ধান পাকার আগেই ব্লাস্ট রোগে শীষ চিটা হয়ে মরে যাচ্ছে গাছ। কষ্টের ফসল নষ্ট হতে দেখে জমিতে এসে কান্না করা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না।

কৃষক ফয়াজ মিয়া বলেন, কৃষি অফিস থেকে কোনো পরামর্শ পাই না। কৃষকেরা এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কোনো কৃষি অফিসারকে দেখা যায়নি। উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শ চাইলে বলে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে গেছে। মাঠে যে কোন কর্তা কাজ করে, তাকেই তো এ পর্যন্ত চিনলাম না। 

কৃষক ফুয়াদ মিয়া বলেন, দুঃসময়ে কৃষি বিভাগকে পাশে না পেয়ে স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শে বারবার ঔষধ ছিটিয়েও রক্ষা করতে পারচ্ছি না ধান ক্ষেত। 

গোবিন্দগঞ্জের পুরানদহ গ্রামের কৃষক বাবলু মিয়া বলেন, হাইব্রিড জাতের ধানে পচারি রোগ ধরছে। আস্তে আস্তে পুরো বিলে ছড়িয়ে পড়ছে।

পলাশবাড়ী উপজেলা নান্দিশহর গ্রামের কৃষক হাকিম মিয়া বলেন, আধা পাকা ধানে কারেন্ট পোকা লাগছে। কয়েক দিন থেকে বিএসকে (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা) খুঁজতেছি। কোনো পাত্তা পাচ্ছি না। ওমরা অফিসার হয়ে যদি জমিতে না আসে, হামারে খোঁজ না নেয়। তাহলে সরকার ওমোহরক মাগনামাগনি বেতন দেয় ক্যা?

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, ধানের রোগবালাই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ক্ষেতের ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই কেটে ফেলতে হবে। কৃষকদের সচেতন করতে কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এরপরও মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement