ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স-কানাডা

Published : ০২:২৭, ২১ মে ২০২৫
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যে যুদ্ধ শুরু করেছিল, সেই যুদ্ধের অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ, পুনরায় সরবরাহ-সবটাই করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অন্যান্য মিত্ররাও নিজেদের মতো করে কোনও না কোনওভাবে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে।
হামাসের হামলায় যে ১২০০ জনকে হত্যা করা হয় (যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিক ছিলেন) এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করার পর ইসরায়েলের তরফে নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি প্রতি সহানুভূতি ও একাত্মতাও প্রকাশ করেছিল মিত্র দেশগুলো।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ইসরায়েল সেই সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। অন্তত ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডার কথা মাথায় রাখলে বিষয়টা তাই দাঁড়াচ্ছে। গাজায় ইসরায়েল যেভাবে যুদ্ধ চালাচ্ছে তার তীব্র নিন্দা করেছে এই তিন দেশ।
তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে নতুনভাবে আক্রমণ করা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, তার এই পদক্ষেপ হামাসকে ধ্বংস ও অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধার করতে এবং পুরো গাজাকে সরাসরি ইসরায়েলি সামরিক নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিন দেশের বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সেই যুক্তিকে খারিজ করার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।
একইসঙ্গে ওই তিন দেশের সরকার বলেছে তারা ‘গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের তীব্র বিরোধিতা করে’। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গাজার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের মাত্রা অসহনীয় হয়ে পড়েছে। দেশগুলোর তরফে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির আহ্বানও জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি তারা ইসরায়েলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সাতই অক্টোবরের ‘জঘন্য আক্রমণের’ পরে তারা (দেশগুলো) মনে করেছিল ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের আত্মরক্ষা করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা একেবারে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজায় ‘ন্যূনতম’ খাবার প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সেখানকার মানুষদের জন্য ‘সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত’ বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, লন্ডন, অটোয়া এবং প্যারিসের নেতারা সাতই অক্টোবর ইসরায়েলে গণহত্যা হামলার জন্য ব্যাপক পুরষ্কার দিচ্ছেন এবং এই জাতীয় নৃশংসতাকে আরও আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন, হামাস যদি তাদের হেফাজতে থাকা বাকি জিম্মিদের ফিরিয়ে দেয়, অস্ত্র সমর্পণ করে, তাদের নেতাদের নির্বাসনে যাওয়ার কথা মেনে নেয় এবং যদি গাজাকে বেসামরিকীকরণ করা হয় তবেই যুদ্ধের অবসান হতে পারে।
তিনি বলেছেন, কোনও দেশই এর চেয়ে কম কিছুতে সম্মত হবে বলে আশা করা যায় না এবং ইসরায়েলও মানবে না।
আন্তর্জাতিক জরিপের উপর ভিত্তি করে গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা জারি করার পর সেখানে চলমান সংঘর্ষ শেষ করার জন্য ইসরায়েলের উপর ব্যাপক পরিমাণে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওয়ারেন্টও রয়েছে যা তিনি "ইহুদি-বিদ্বেষী" বলে খারিজ করেছেন।
লন্ডনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সম্মেলনে ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা গাজার মানবিক সংকটকে এমন ‘এক ট্র্যাজেডি যেখানে আন্তর্জাতিক আইন পদ্ধতিগতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে এবং পুরো জনগোষ্ঠীকে অসম সামরিক শক্তির শিকার হতে হচ্ছে’ বলে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছিলেন, মানবিক সহায়তার জন্য নিরাপদ, দ্রুত ও অবাধ প্রবেশাধিকার থাকতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্বে ইউরোপীয় মিত্ররা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছে। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে তা এখন পর্যন্ত তাদের সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা বলে মনে করা হয়।
এনই