লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক: নির্বাচনি অগ্রযাত্রা ও জাতীয় ঐক্যের বার্তা

Published : ২৩:৫৮, ১৩ জুন ২০২৫
লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১৩ জুন) দুপুর ২টায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটব্যাপী এ আলোচনায় দেশীয় রাজনীতির বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়ে গভীর মতবিনিময় হয়।
বৈঠকে অংশ নেওয়ার আগে তারেক রহমানকে হোটেলের অভ্যন্তরে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
আলোচনা পর্বে সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশ বজায় ছিল এবং বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উভয়পক্ষ বৈঠকের ফলাফলের কথা জানান।
যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, তারেক রহমান আগামী বছরের রমজানের পূর্বে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতামতও উপস্থাপন করেন যে, এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে তা জাতীয় স্বার্থে অধিকতর উপযোগী হবে।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, এপ্রিল ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন এবং রমজান শুরুর আগেই নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে, যদি সংস্কার ও বিচারসংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জিত হয়।
এই বৈঠককে ‘ফলপ্রসূ’ আখ্যা দিয়ে উভয়পক্ষ পারস্পরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বৈঠক শেষে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে দুটি বই ও একটি উৎকৃষ্ট কলম উপহার দেন, যা তিনি উৎফুল্লচিত্তে গ্রহণ করেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশন অচিরেই নির্বাচনের নির্ধারিত তারিখ ঘোষণা করবে এবং যৌথ বিবৃতিতে উল্লিখিত সংস্কার ও বিচারমূলক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জাতি এই বৈঠকের জন্য অপেক্ষায় ছিল। তিনি একে রাজনীতির ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ড. ইউনূস বিচক্ষণতা এবং রাষ্ট্রনায়কসুলভ দূরদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন। এ বৈঠক প্রমাণ করে যে, সংকটকালেও জাতীয় ঐক্যের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, এখন অতীতের বিভেদ ভুলে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের সময় এসেছে। গণতন্ত্রের চর্চা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নেওয়াই বর্তমান প্রজন্মের প্রধান দায়িত্ব।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শুধু একটি রাজনৈতিক সাক্ষাৎ নয়- বরং এটি জাতির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণে একটি সম্ভাবনাময় মঞ্চ। রাজনীতির উত্তপ্ত আবহে এই বৈঠক শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক চর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে
বিডি/ও