১১৪ বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কিংবদন্তি ম্যারাথন দৌড়বিদ

Published : ১৭:০৩, ১৫ জুলাই ২০২৫
প্রথম বিশ্বযুদ্ধেরও (১৯১৪) ৩ বছর আগে জন্ম হয়েছিল ফৌজা সিংয়ের। জন্মের ঠিক ১০০ বছর পর ২০১১ সালে ম্যারাথনে দৌড় সম্পন্ন করে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন তিনি।
সোমবার (১৪ জুলাই) সড়ক দূর্ঘটনায় ১১৪ বছর বয়সে মারা গেছেন এই কিংবদন্তি দৌড়বিদ। পরে বার্তা সংস্থা পিটিআই তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
সবচেয়ে বেশি বয়সে ম্যারাথন সম্পন্ন করা ফৌজা সিং গতকাল পাঞ্জাবের জলন্ধর জেলায় নিজগ্রাম বিয়াসের রাস্তায় হাঁটতে বের হয়েছিলেন। এ সময় একটি অজ্ঞাত যানবাহনের ধাক্কায় মারাত্মক আঘাত পান এই কিংবদন্তি দৌড়বিদ।
'টার্বানড টর্নেডো' খ্যাত ফৌজা গত পহেলা এপ্রিল ১১৪তম জন্মদিন পালন করেন। ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে (২০০-২০১৩) মোট ৯টি পূর্ণ ম্যারাথন (একটি পূর্ণ ম্যারাথনে ২৬.২ মাইল বা ৪২.১৯৫ কিলোমিটার দৌড়াতে হয়) সম্পন্ন করেছেন তিনি।
এই দৌড়বিদ অ্যাডিডাসের ‘ইম্পসিবল ইজ নাথিং’ প্রচারাভিযানের মুখপাত্র হন, যেখানে আরও ছিলেন কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলি এবং ফুটবল কিংবদন্তি ডেভিড বেকহ্যাম।
১৯১১ সালের বিয়াসের এক কৃষক দম্পতির ঘরে জন্ম ফৌজা সিংয়ের। ৪ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। স্ত্রী গিয়ান কৌরের মৃত্যুর পর ১৯৯৩ সালে এক ছেলের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান তিনি। পরে করোনা মহামারির সময় দেশে ফিরে যান তিনি।
কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, শৈশবে পা দুটি বেশি চিকন থাকায় হাঁটতে পারতেন না তিনি, 'শৈশবে আমি খুবই দুর্বল ছিলাম। ৫ বছর বয়স পর্যন্ত আমার হাঁটতে সমস্যা হতো কিন্তু এরপর আমি ক্ষেতে সময় কাটাতে শুরু করলাম এবং আমার পরিবারের সাহায্য আর ওয়াহেগুরুর (শিখধর্মে স্রষ্টার নাম) কৃপায় আমি হাঁটতে শুরু করলাম।'
ইংল্যান্ডে থাকার সময় ইলফোর্ডে নিজের বাড়ির আশেপাশের পাবলিক পার্কে দীর্ঘ পথ হাঁটা ও দৌড়ানো শুরু করেন। পরে ম্যারাথন কোচ হরমন্দর সিংহের সঙ্গে পরিচয়ের পর ফৌজা ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে ৮৯ বছর বয়সে লন্ডন ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেন এবং ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটে দৌড় শেষ করেন, যা সিনিয়র বয়স ক্যাটাগরিতে আগের বিশ্ব রেকর্ডের চেয়ে ৫৮ মিনিট কম।
ইংল্যান্ড থেকে টেলিফোনে হরমন্দর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'লন্ডন ম্যারাথনের আগেও তিনি যেকোনো আবহাওয়াতেই অনুশীলন করতেন। ‘ব্লিস’ নমের একটি চ্যারিটি সংস্থা ছিল, যা নবজাতকদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করত এবং তার পুরো কর্মজীবনে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।'
২০০০ সাল থেকে ফৌজা লন্ডন ম্যারাথনে ৬ বার, টরেন্টো ম্যারাথনে ২ বার এবং নিউইয়র্ক ম্যারাথনে একবার দৌড়েছেন।
বিখ্যাত লেখক খুশবন্ত সিং 'টারবানড টর্নেডো' নামে ফৌজার জীবনি লিখেছেন।
এই দৌড়বিদের স্মরণে লিখেছেন, 'বাবা এই দুনিয়াকে সবসময়ই কিছু না কিছু দিয়েছেন। সে পৃথিবীজুড়ে দাতব্য কাজে সহযোগিতা করেছে। ২০০৫ সালে আমি প্রথমবারের মতো তাকে দেখি যখন আমি 'শিখ আনলিমিটেড' বইটা লিখছিলাম।
২০১৫ সালে ফৌজা ক্রীড়া এবং দাতব্য কাজে তার অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটিশ এম্পায়ার মেডেল (British Empire Medal) লাভ করেন। তিনি লন্ডন অলিম্পিকের মশালবাহকদেরও একজন ছিলেন।
২০১১ সালে, ১০০ বছর বয়সে ফৌজা টরন্টো ম্যারাথনে অংশ নেন এবং ৮ ঘণ্টা ১১ মিনিটে দৌড় শেষ করেন। পরের বছর, ২০১২ সালে তিনি লন্ডনে নিজের শেষ পূর্ণ ম্যারাথনে অংশ নেন এবং সময় নেন ৭ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২১ সেকেন্ড।
এরপর তিনি ১০ কিমি ক্যাটাগরিতে ম্যারাথনে অংশ নিতে থাকেন, যার মধ্যে ২০১৩ সালে হংকং ইভেন্টটি ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ।
একবার লাহোর ম্যারাথনের ১০ কিমি ক্যাটাগরিতে তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বিডি/ও