আজ ২৩শে জুলাই তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী

আজ ২৩শে জুলাই তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী

The Business Daily

Published : ১৬:১৫, ২৩ জুলাই ২০২৫

আজ ২৩ জুলাই ২০২৫, বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবময় নাম তাজউদ্দীন আহমদ-এর জন্মের শততম বছর। ১৯২৫ সালের এই দিনে গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার দোহারে জন্ম নিয়েছিলেন এই দেশপ্রেমিক, যিনি আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এক অসাধারণ দূরদর্শিতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে।

তাজউদ্দীন আহমদ শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না—তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান, সাহসী, দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দি থাকার পরেও অস্থায়ী সরকার গঠন করে সফলভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন:

তাজউদ্দীন আহমদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে এক প্রগতিশীল মুসলিম পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ও নেতৃত্বগুণে সমৃদ্ধ ছিলেন।

তিনি প্রথমে জামালপুর ও পরে ঢাকার মুসলিম গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে, এবং পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

তাজউদ্দীন আহমদ রাজনীতিতে যুক্ত হন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ১৯৪৩ সালে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন, তবে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ)-এ যুক্ত হন।

তিনি ছিলেন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এবং পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনের অন্যতম রূপকার।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা:

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানিরা গ্রেপ্তার করলে তাজউদ্দীন আহমদ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের শিলিগুড়ি হয়ে কলকাতায় পৌঁছান।

তিনি ১০ এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং কার্যত তিনি তখনই বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব দেন।

তার দূরদর্শিতা, সাংগঠনিক দক্ষতা, কূটনৈতিক পরিপক্বতা এবং সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই মুক্তিযুদ্ধ সুসংগঠিত হয়ে বিজয় অর্জনে সফল হয়।

স্বাধীন বাংলাদেশে অবদান:

স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রগঠন ও প্রশাসন বিনির্মাণে নেতৃত্ব দেন। নতুন দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, প্রশাসন, সামরিক ও কূটনৈতিক কাঠামো গঠনে তার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল অসামান্য।

তবে রাজনৈতিক অন্তঃকলহ ও মতপার্থক্যের কারণে তিনি ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

নির্মম হত্যা ও শহীদ তাজউদ্দীন:

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর গ্রেফতার হন তাজউদ্দীন আহমদ। এরপর ৩ নভেম্বর কারাগারে বন্দী অবস্থায় অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ইতিহাসে এই দিনটি জেলহত্যা দিবস নামে পরিচিত।

ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ:

তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন নীতিবান, সৎ, আত্মমর্যাদাশীল এবং আত্মত্যাগী নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। তার স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন এবং সন্তানরাও দেশ ও রাজনীতির সেবায় ছিলেন সক্রিয়।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement