মেসির জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ফুটবলের মাঠ যেন একটা স্বাধীন রাজ্য। এই রাজ্যের রাজা যদি কেউ হন, তবে নিঃসন্দেহে তিনি লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। আজ ২৪ জুন, এই ফুটবল জাদুকরের জন্মদিন। ৩৭ বছরে পা রাখলেন তিনি। তাঁর জন্ম আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। ছোটবেলা থেকেই শরীরের নানা সমস্যা ছিল, বিশেষ করে হরমোনের ঘাটতি। সেই ঘাটতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই এগিয়ে গেছেন তিনি।

লা মাসিয়া থেকে শুরু, এরপর বার্সেলোনায় এক স্বর্ণযুগ, তারপর প্যারিস, আর এখন মায়ামি। প্রতিটি ধাপেই মেসি রেখে গেছেন নিজস্ব এক ছাপ, ফুটবলের ভাষা দিয়ে লিখেছেন একেকটি কবিতা। গোলের সংখ্যা, ট্রফির মিছিল বা পুরস্কারের বিশ্লেষণ দিয়ে মেসিকে বিচার করা যায় না। কারণ, তিনি শুধু ফুটবলার নন—একটা সময়, একটা অনুভব, একটা প্রেরণা।

অর্জন? ব্যালন ডি’অর জিতেছেন আটবার। বিশ্বকাপ জিতেছেন ২০২২ সালে, কোপা আমেরিকা ও ফাইনালিসিমার মতো বড় আসরে দেশের জার্সিতে গড়েছেন ইতিহাস। ক্লাব ক্যারিয়ারে বার্সেলোনার হয়ে জিতেছেন চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দশটি লা লিগা সহ অসংখ্য শিরোপা।

কিন্তু এর চেয়েও বড় তাঁর প্রভাব। ফুটবল ইতিহাসে এমন কয়েকজনই আছেন, যাদের খেলা দেখেই একটি প্রজন্ম স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পেলে, ম্যারাডোনা—তাদের পরেই যে নামটি উঠে আসে, তা নিঃসন্দেহে মেসি। আজকের অনেক তরুণ বলে, "আমি মেসির মতো খেলতে চাই।"

মাঠে মেসি যতটা জাদুকর, মাঠের বাইরে ততটাই নিরহঙ্কার ও বিনয়ী। জন্মদিনে বড় কোনো পার্টি নয়, বরং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোতেই শান্তি খুঁজে নেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও খুব বেশি সরব নন, নিজের কাজটাকেই তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন—ফুটবল খেলা।

বর্তমানে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন তিনি। ক্লাব বিশ্বকাপে দলকে শেষ ষোলোতে তোলার কৃতিত্ব তাঁরই। সামনে রয়েছে পুরোনো ক্লাব পিএসজির মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ—একটি ম্যাচ, যেখানে আবেগ আর প্রতিশোধের গল্প একসঙ্গে লেখা হতে পারে।

এই বয়সেও মেসি মাঠে নামলে দর্শকের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। বল পায়ে পেলেই যেন সময় থমকে দাঁড়ায়। এমন একটি প্রভাব সৃষ্টিকারী খেলোয়াড় যুগে যুগে হাতে গোনা কয়েকজনই হয়েছেন। মেসি তাঁদেরই একজন—এবং অনেকের কাছে, সবার সেরা।

জন্মদিনে কী চাইতেন মেসি? সম্ভবত কিছুই না। তাঁর নিজের কথায়, "আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপহার ফুটবল।"

আমাদের পক্ষ থেকে একটাই চাওয়া—মেসি যেন থাকেন আরও বহু বছর, তাঁর মতো করে। মাঠে নাও দেখা যেতে পারে অনেকদিন, কিন্তু তাঁর ছায়া থাকবে প্রতিটি তরুণ ফুটবলারের মধ্যে, থাকবে অনুপ্রেরণায়, ভালোবাসায়, শ্রদ্ধায়।

শুভ জন্মদিন, লিওনেল মেসি। তোমাকে দেখেই আমরা স্বপ্ন দেখতে শিখেছি।