’হঠাৎ পকেটে করে ৫-৬ হাজার কোটি টাকা সরানো যায় না’

’হঠাৎ পকেটে করে ৫-৬ হাজার কোটি টাকা সরানো যায় না’ চার কোটি আত্মসাতের মামলায় আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়

The Business Daily Desk

Published : ০১:৫০, ৪ আগস্ট ২০২৫

প্রতারণার মাধ্যমে চার কোটি আত্মসাতের মামলায় অনলাইনে বিমানের টিকিট কাটার প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্টের তিনজনের জামিন আবেদনের শুনানিতে আদালত বলেছেন,'৫-৬ হাজার কোটি টাকা তো হঠাৎ করে পকেটে করে নিয়ে যেতে পারে না।'

রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান আসামিদের জামিন শুনানিতে একথা বলেন।


এদিন প্রতিষ্ঠানটির হেড অফ ফিন্যান্স মো. সাকিব হোসেন, চীফ কমার্শিয়াল অফিসার সাইদ আহমেদ এবং চীফ অপারেটিং অফিসার এ.কে.এম সাদাত হোসেনকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার এসআই মো. সাদ্দাম হোসেন।

আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী রবিউল ইসলাম এবং মোফাজ্জল হোসেন ফারুক জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তারা বলেন, 'তারা নিজেরাই ভূক্তভোগী। তারা কর্মচারী ছিলেন। মালিক তো চম্পট।

তারা ঘটনার সাথে জড়িত না। কর্মচারী থাকার কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কিন্তু অফিসে গিয়ে কথা বলেছেন। অফিসে না গেলে কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করা যেত না। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। জামিনের প্রার্থণা করছি।'

বাদীপক্ষে আফজাল হোসেন মৃধা জামিনের বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন,'মামলার এজাহারনামীয় দুই আসামি পলাতক। তারা কানাডা চলে গেছে।

এক হাজার জনের বেশি মানুষ হজ, ওমরা করার টাকা সাবমিট করে। এরা এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। জামিনের আপত্তি করছি।'

রাষ্ট্রপক্ষে মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন জামিনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন,'মামলার মোট আসামি পাঁচজন। হজ, ওমরায় পাঠানোর কথা বলে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। তারা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।

দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের সাথে প্রতারণা করেছে। তাদের জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, ৫-৬ হাজার কোটি ১/২ দিনে আত্মসাৎ করা যায় না। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ চাকরী করেন। ৫-৬ হাজার কোটি তো হঠাৎ করে পকেটে করে নিয়ে যেতে পারে না। এর দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। বিষয়টা তদন্তসাপেক্ষ। জামিন নামঞ্জুর, আসামিরা কারাগারে যাবে।

এর আগে রোববার সরকার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস প্রোপাইটার মো. বিপুল সরকার বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। এতে ফ্লাইট এক্সপার্টের সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম, মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট, মো. সাকিব হোসেন, সাইদ আহমেদ ও এ.কে.এম সাদাত হোসেনকে আসামি করা। তাদের বিরুদ্ধে ১৭ টি প্রতিষ্ঠান থেকে চার কোটি ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে৷

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা অনলাইনে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ী হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্লায়েন্টদের বিমান টিকিট, হোটেল বুকিং, প্যাকেজ ট্যুরস, হজ্জ্ব ও ওমরাহ প্রদানের ব্যবসা করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় হাজার হাজার এজেন্সী ও লক্ষাধিক গ্রাহক সেবার জন্য আর্থিক লেনদেন করে ব্যবসা পরিচালনা করছিল। গত ২ আগস্ট সকাল থেকে আসামীদের অনলাইন সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।

জন্য এজেন্সীর মালিকরাসহ ব্যক্তিগত লেনদেনকারীরা তাদের অফিসে উপস্থিত হন৷ তারা এসে দেখেন, মতিঝিল থানাধীন সিটি সেন্টারস্থ সকল ফ্লোরের অফিস খোলা থাকলেও ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত থাকায় কর্মচারীরা কোন প্রকার সেবা প্রদান করতে পারতে ছিল না।

পরে তারা জানতে পারেন যে, আসামী ফ্লাইট এক্সপার্টের সালমান বিন রশিদ শাহ সায়েম ও মক্কা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ রশিদ শাহ সম্রাট ৫-৬ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা মূলকভাবে আত্মসাৎ করে বিদেশ পালিয়েছে।

ফ্লাইট এক্সপার্ট তাদের নিজস্ব আইএটিএ এর বাইরে কতিপয় ট্রাভেলস এজেন্সির আইএটিএ ব্যবহার করে টিকিট বিক্রয় করত। যেমন-হাজী ইয়ার ট্রাভেলস লি., সোমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস, প্রোমা ইত্যাদি।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement