বায়ুদূষণে আজ ফের শীর্ষ পাঁচে কানাডার রাজধানী

Published : ১২:২৬, ২৬ জুলাই ২০২৫
বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় বরাবরই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু শহরের নাম চোখে পড়লেও ইউরোপের দেশগুলোর কোনো শহরের দেখা সচারচার মেলে না। সেখানে উত্তর আমেরিকার কানাডার মতো পরিচ্ছন্ন দেশের কোনো শহর খুঁজে পাওয়া আরও দুষ্কর। অথচ দুই সপ্তাহে দুবার দূষিত বাতাসের শহরের তালিকার শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছে কানাডার রাজধানী মন্ট্রিয়াল।
বাংলাদেশ সময় শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টায় মন্ট্রিয়ালের বায়ুদূষণের একিউআই স্কোর ছিল ১৭৩, বাহরাইনের মানামার সঙ্গে যা তৃতীয় দূষিত শহর। তবে তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল মন্ট্রিয়াল। এই স্কোর হওয়ার অর্থ শহরটির বাতাস এই সময়ে ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে রয়েছে।
কণা দূষণের এই সূচক ১৫১ থেকে ২০০ হলে তা ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-এর বেশি হলে তা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে ৩০০-এর বেশি যেকোনো সূচক।
কানাডার পরিবেশবিষয়ক সংস্থা এনভায়রনমেন্ট কানাডা জানিয়েছে, প্রেইরিজে ছড়িয়ে পড়া দাবানলের ধোঁয়ার কারণে মন্ট্রিয়ালের বাতাসের মান খারাপ হয়ে পড়েছে এবং ওই এলাকায় দৃশ্যমানতাও কমে গেছে। আগামীকাল পর্যন্ত এই দূষিত অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।
এই পরিস্থিতিতে মানুষকে বাইরে থাকার সময় কমিয়ে আনার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিভিন্ন কার্যক্রম ও অনুষ্ঠান বাতিল বা স্থগিত রাখার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, শিশু ও নবজাতক, আগে থেকেই কোনো অসুস্থতা বা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন এবং যারা বাইরে কাজ করেন—এমন ব্যক্তিদের এই সময়ে বাইরে শ্রমসাধ্য কোনো কাজ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এনভায়রনমেন্ট কানাডা এক বিবৃতিতে বলেছে, বায়ুদূষণের কারণে চোখ, নাক ও গলায় জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা কিংবা হালকা কাশির মতো সাধারণ ও মৃদু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা বা তীব্র কাশির মতো গুরুতর উপসর্গও দেখা দিতে পারে। এসবের কোনো একটি উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।
এর আগে, গত মঙ্গলবারও (২২ জুলাই) অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে মন্ট্রিয়ালের বাতাস।
একই সময়ে মন্ট্রিয়ালের চেয়ে আরও দূষণ নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর ছিল কাম্পালা। উগান্ডার রাজধানীর একিউআই স্কোর ছিল ১৮৪। এর চেয়ে দশ কম নিয়ে দ্বিতীয় দূষিত শহর ছিল মিসরের কায়রো, আর ১৭৩ নিয়ে তৃতীয় স্থানে বাহরাইনের মানামা। গতকাল শীর্ষে থাকা কিনশাসা আজ নেমেছে পাঁচে, স্কোর ১৬৪।
অন্যদিকে, লাহোর ও দিল্লির বায়ুমানে উন্নতি হয়েছে। একই সময়ে ১৪৬ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার একাদশ স্থানে অবস্থান করছিল লাহোর, আর ৮৪ নিয়ে ২৩তম স্থানে ছিল দিল্লি।
তবে গতকাল বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাতাস ‘ভালো’ শ্রেণিভুক্ত হলেও আজকের রৌদ্রজ্জ্বল সকালে ফের কিছুটা অবনতি হয়েছে। ৬৯ একিউআই স্কোর নিয়ে ফের ‘মাঝারি’ শ্রেণিতে নেমেছে ঢাকা। তবে শীর্ষ দূষিত শহরগুলোর থেকে বেশ দূরে, ৩১তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘ভালো’ বলে গণ্য করা হয়। আর স্কোর ৫০ থেকে ১০০-এর মধ্যে থাকলে তা ‘মাঝারি’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এ ছাড়া ১০১ থেকে ১৫০ হলে ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পর্যায়ে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক নির্ধারিত হয় পাঁচ ধরনের দূষণের ভিত্তিতে— বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড (এনও₂), কার্বন মনো-অক্সাইড (সিও), সালফার ডাই-অক্সাইড (এসও₂) ও ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরেই বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ভুগছে। শীতকালে এখানকার বায়ুমান সাধারণত সবচেয়ে খারাপ থাকে, আর বর্ষাকালে তুলনামূলকভাবে উন্নত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো— স্ট্রোক, হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্ট (সিওপিডি), ফুসফুসের ক্যান্সার এবং শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ।
তথ্যসূত্র : দ্য কানাডিয়ান প্রেস