সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণে ২২ সদস্যের কমিশন গঠন

Published : ২৩:৪২, ২৭ জুলাই ২০২৫
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণে ২২ সদস্যের জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করেছে সরকার। কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সরকারের কাছে এই সুপারিশমালা জমা দিতে হবে। এ ছাড়া কমিশন বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সুপারিশমালা জমা দেবে।
রবিবার (২৭ জুলাই) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ১৫-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত প্রজাতন্ত্রের সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫ গঠন করা হয়েছে। সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য করা হয়েছে সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান, সাবেক হিসাব মহানিয়ন্ত্রক মো. মোসলেম উদ্দীন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিমকে।
কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্যরা হলেন—সাবেক মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক আহমেদ আতাউল হাকিম, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইন, সাবেক সচিব ড. জিশান আরা আরাফুন্নেসা, মেজর জেনারেল (অব.) এ আই এম মোস্তফা রেজা নূর, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো হাবিবুর রহমান, সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা মিজু তহমিনা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাকছুদুর রহমান সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনিমেল ব্রিডিং অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামছুল আলম ভূঁঞা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম মাসুদ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আতিকুল হক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ কে এনামুল হক, সশস্ত্র বাহিনীর একজন প্রতিনিধি (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), আইন ও বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক মনোনীত), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত), জননিরাপত্তা বিভাগের একজন প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (জননিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক মনোনীত), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্টি (এফবিসিসিআই)-এর সভাপতি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রবিধি, বাস্তবায়ন, আইন ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান)।
কমিশনের সদস্যসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন সরকারের একজন সচিব অথবা অতিরিক্ত সচিব। যিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। কমিশন প্রয়োজনে খণ্ডকালীন সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে কমিশনের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান, সরকারি মঞ্জুরিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে কমিশন কী কী বিষয়ে সুপারিশ করবে, তা প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে—কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বিশেষায়িত চাকরিধারীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ। বেতন-ভাতার ওপর আরোপযোগ্য কর (আয়কর) জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো স্থিরীকরণ। বেতন-বহির্ভূত অন্যান্য সুবিধা, যেমন-বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যভার, মহার্ঘ, উৎসব এবং শ্রান্তিবিনোদন ইত্যাদি ভাতা নিরূপণ। মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ।
এ ছাড়া যথোপযুক্ত বা সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর সুবিধাদি নির্ধারণ। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান নিরূপণ, মূল্যায়নপূর্বক বেতন-ভাতা কাঠামোয় প্রতিফলন। সরাসরি সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) সংক্রান্ত প্রাধিকারগুলো আর্থিক সুবিধায় নগদায়ন এবং রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণ। উচ্চতর গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তিতে বেতনক্রম নিরীক্ষাক্রমে কোনো অসংগতি পরিলক্ষিত হলে তা দুরীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন।
সুপারিশ প্রণয়নে কমিশন যেসব বিষয় বিবেচনা করবে:
পিতা-মাতাসহ অনুর্ধ্ব ছয়জনের একটি পরিবারের জীবন-যাত্রার ব্যয়। অনূর্ধ্ব দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা। সংশ্লিষ্ট সংস্থা, প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের অবস্থা। দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদ যোগান ও ক্রমান্বয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায়। জনপ্রশাসনে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও কর্মোদ্যোগ বৃদ্ধি করে সেবার মান উন্নয়ন।