স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য: অধ্যাপক আলী রীয়াজ

Published : ০০:৫০, ২৮ জুলাই ২০২৫
স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনসহ মোট ১২টি বিষয়ে এ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৯তম দিনের আলোচনা শেষে আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একথা জানান।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশের আইনানুগভাবে ও প্রভাবমুক্ত হয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকরণ, পুলিশ বাহিনীর যেকোনো সদস্যের উত্থাপিত অভিযোগ এবং নাগরিকদের পক্ষ হতে পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিষ্পত্তিকরণের উদ্দেশ্যে একটি ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কমিশনের ১৯ তম দিনের আলোচনায় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের অব্যাহত আলোচনায় এ পর্যন্ত ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ৭টি বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু নিষ্পত্তি হয়নি।
কমিশনের সহ-সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশ কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা উল্লেখ করে বলেন, নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের চেয়ারম্যান হবেন আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, যাঁর বয়স ৭৫ বছরের ঊর্ধ্বে নয় এবং অতিরিক্ত পুলিশ মহা-পরিদর্শকের নিচে এবং ৬২ বছরের ঊর্ধ্বে নয় এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা হবেন কমিশনের সদস্যসচিব।
তিনি বলেন, এছাড়া কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হবেন জাতীয় সংসদের সংসদ নেতার প্রতিনিধি, বিরোধীদলীয় নেতার প্রতিনিধি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের একজন করে প্রতিনিধি, সচিব পদমর্যাদার নিচে নহে এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন), জেলা জজ পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা অথবা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তালিকাভুক্ত একজন আইনজীবী যাঁর আইন পেশায় ন্যূনতম ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং একজন মানবাধিকার কর্মী যার দেশে বিদেশে নিবন্ধিত মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থায় ন্যূনতম ১০ বছরের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ন্যূনতম ২ জন নারী সদস্য থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়েও আজ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো এ সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে যে, একজন ব্যক্তি তার সমগ্র জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন।
এছাড়াও তিনি ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা সমাপ্ত হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামীকাল কমিশনের পক্ষ হতে রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় সনদের খসড়া প্রেরণ করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে আজকের আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি-সহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, আজকের বৈঠকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, নাগরিকের মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণের প্রস্তাব, পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ আলোচনায় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত জুলাই সনদ প্রণয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অমীমাংসিত সকল বিষয় ঐকমত্য গড়তে আগামী কিছুদিন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা চলমান থাকবে