রোহিঙ্গাদের শিবিরে খরচ বন্ধের পরিকল্পনা: ড. খলিলুর

Published : ১০:২৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে বাংলাদেশ আর রোহিঙ্গা শিবিরে থাকা শরণার্থীদের পেছনে অর্থ ব্যয় করতে চাইছে না।
বরং এই অর্থের বড় অংশ খরচ হবে মিয়ানমারে, যাতে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে নতুন জীবন শুরু করতে পারে। “তাদের ভবিষ্যত ফিরিয়ে দিন,” বলেছেন ড. খলিলুর, যখন তিনি নিউইয়র্কে এক আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় অংশ নেন।
২৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্ব শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয় ব্যবস্থা: কী ভুল হয়েছে এবং কীভাবে তা ঠিক করা যায়’ শীর্ষক আলোচনায় পানামা, লাইবেরিয়া, বাংলাদেশ ও কসোভোর প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। মূল আয়োজন পরিচালনা করেন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিজ গ্রামে ফিরে যেতে শুরু করেছে। স্থানীয় প্রশাসনেও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া আরাকান আর্মি রাখাইনে প্রধান একটি শহরে একটি গ্র্যান্ড মসজিদ নির্মাণ করেছে।
বাংলাদেশের শরণার্থী নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ ভয়াবহ গণহত্যার শিকার হয়, যার ফলে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।
সৌভাগ্যক্রমে সেই যুদ্ধ দ্রুত সমাপ্ত হয় এবং সব বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনারও কক্সবাজার শিবিরে একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন।
ড. খলিলুর জানান, গত আট বছরে বিশ্ব রোহিঙ্গাদের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি ডলার খরচ করেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশও এই সময়ে বিপুল অর্থ ও সম্পদ ব্যয় করেছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, মিয়ানমার পালানোর আগে রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্ব কত অর্থ ব্যয় করেছিল? এক টাকাও নয়।
তবে তিনি সতর্ক করেছেন, রোহিঙ্গাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। “শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, তারা দেশে ফিরে যেতে চায়। রমজান উপলক্ষে সবাই ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছে,” উল্লেখ করেন তিনি।
মানবিক তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে ড. খলিলুর বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরণার্থীরা যতদিন বাংলাদেশে থাকবে, তাদের খাওয়াতে ও যত্ন নিতে হবে। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। “এতে প্রতি বছর শিবিরে জন্ম নেওয়া ৩০ হাজার শিশুর ভবিষ্যৎ উন্নত করা সম্ভব হবে। তারা অন্য কারও থেকে কম নয়।”
রাখাইনের ভালো খবরও তিনি তুলে ধরেন। আরাকান আর্মি ইতিমধ্যেই অঞ্চলটির ৮৫–৯০ শতাংশ দখল করেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিজের গ্রামে ফিরে গেছে এবং স্থানীয় প্রশাসন গঠিত হয়েছে। নতুন মসজিদ নির্মাণের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, “এটাই সময়, যখন রাজনৈতিকভাবে এই সংকট সমাধানে এগোনো উচিত।”
ড. খলিলুর সবাইকে আহ্বান জানান, আগামী কয়েক মাসে একত্রিত হয়ে রাজনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে। রোহিঙ্গারা আশা রাখছে, বিশ্ব তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেবে।
আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোকে পুরোনো ও ভাঙা আন্তর্জাতিক শরণার্থী ও আশ্রয় ব্যবস্থার সমস্যাগুলো বুঝতে সাহায্য করা এবং দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক ও মানবিক সমাধানের জন্য সংস্কার প্রস্তাব করা।
বিডি/এএন