রেমিট্যান্স: অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা

Published : ১৫:৩৪, ২ নভেম্বর ২০২৪
রেমিট্যান্স কী
বিদেশে কর্মরত কোনও নাগরিক বা ব্যক্তি যখন তার নিজের দেশে প্রিয়জনের কাছে অর্থ স্থানান্তর করে, তখন তাকে রেমিট্যান্স বলা হয়। সহজ কথায়, প্রবাসে কর্মরত নাগরিকদের স্বদেশে প্রেরিত অর্থকে রেমিটেন্স বলে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি মানুষেরা তাদের অর্জিত যে অর্থ আমাদের দেশে প্রেরণ করে, আমরা তাকে রেমিট্যান্স বলি।
রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশ যোগান দেয় এই রেমিট্যান্স। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং একই সাথে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। রেমিট্যান্স একই সঙ্গে অর্থনীতির প্রাণশক্তি এবং চালিকা শক্তি। রেমিট্যান্সই ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের প্রধান অংশ।
আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে এই রেমিট্যান্স প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। বিদেশে কর্মরত লাখো মানুষের ঘাম ঝরানো শ্রমে অর্জিত টাকা দেশকে বছরের পর বছর ধরে উন্নত করে চলেছে। তাদের পাঠানো টাকায় সচল আমাদের অর্থনীতির চাকা এবং সচল আমাদের জীবন। টাকা তাদের পরিবারের লোকজনের জীবনকে যেমন করছে দারিদ্র্যমুক্ত এবং সচ্ছল, তেমনি দেশের আর্থসামাজিক অবস্থানকে উন্নত করছে। করোনাকালীন সময়ে অনেক বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স
দেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের পাঠানো এ অর্থ দেশের আর্থসামাজিক বিকাশে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে বিবেচিত। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নযাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা নিয়ে আলোচনাটা তাই অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয়।
যদিও দেশীয় শ্রমবাজারে শ্রমশক্তির চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়হীনতার কারণে প্রবাসের শ্রমবাজার আমাদের শ্রমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, একদিকে যেমন প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স সামষ্টিক অর্থনীতির ভিতকে শক্তিশালী করছে, তাদের পাঠানো অর্থ দারিদ্র্যবিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিশুর পুষ্টি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে সৌদি আরবে। সেখানে তাদের সংখ্যা প্রায় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন।
এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, জর্ডান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা কাজ করছেন। তবে মানতেই হয়, তাদের মধ্যে দক্ষ শ্রমিক থেকে অদক্ষ ও স্বল্পশিক্ষিত শ্রমিকের সংখ্যাই অনেক বেশি। গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ ডলার, যা ২০০০ সালে বেড়ে পৌঁছে ১৯৫ কোটি ডলারে। বর্তমানে তা ২৪৭৮ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ৬ শতাংশেরও বেশি।
২০০৮ সালের বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সংকটমুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিল রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্সের কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও অনেক বেড়েছে।
বিডি/এন